‘স্বতন্ত্র’ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ৭ কলেজের বিক্ষোভ
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:০৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিল করে রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজ নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। সায়েন্সল্যাব মোড় দখলে নিয়ে সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকে এ আন্দোলন চলছে। দাবি আদায়ে সকাল থেকে পৃথক পৃথক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের সামনে জড়ো হতে থাকেন।
রবিবার (২০ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টার দিকে পৃথকভাবে মিছিল করেন তারা। রাত ১২টার দিকে আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের একটি দল ঢাকা কলেজের নর্থ হল ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত হয়ে ইডেন কলেজের সামনের রাস্তায় গিয়ে অবস্থান নেন। সেখান থেকে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে পলাশী আবাসিক এলাকায় যায় মিছিলটি।
অন্যদিকে একই সময়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে মিছিল করেন বাঙলা কলেজ এবং কবি নজরুল কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা ঢাবি থেকে মুক্তির দাবিতে হলে ঝটিকা মিছিল করেন। এ সময় তারা, “টু জিরো টু ফোর-অ্যাফিলিয়েটেড নো মোর”, “শিক্ষা না বাণিজ্য- শিক্ষা শিক্ষা”, “ঢাবির প্রহসন মানি না মানবো না”, সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অপরিকল্পিত অধিভুক্তকরণের খেসারত দিচ্ছেন তারা। শিক্ষাজীবন ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এখনো অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অবকাঠামো ও সেবা পেতে হয়রানির শিকার হতে হয়। পরীক্ষার ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, সেশনজটও রয়েছে।
সাত কলেজ সংস্কার আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীরা সেশনজট এবং মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রমের অভাব নিয়ে বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। ঢাবি প্রশাসন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় পর্যাপ্ত শিক্ষক ও কর্মী নিয়োগ দিতে পারেনি। ফলে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতিও রয়েছে।”
ঢাবির মধ্যে সমন্বয়হীনতার রয়েছে অভিযোগ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, “নিয়মিত পরীক্ষার শিডিউল, ক্লাস এবং ফল-সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছায় না। তাই সাত কলেজের জন্য আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন।”
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে সরকারি সাতটি কলেজ নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সোমবার নীলক্ষেত মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। রবিবার সাত কলেজের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়। দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রাথমিক তিনটি কর্মকরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে, এ সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে এ কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছিল, সেটা বিগত ৮ বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিপরীতে এসব কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে নেমে আসে চরম বিশৃঙ্খলা। এক কথায় শিক্ষার মানের উন্নতির পরিবর্তে ঢাবি প্রশাসনের বৈষম্যমূলক বিভিন্ন নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার যথাযথ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।”
এতে আরও বলা হয়, “ঢাবির অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সামনে বর্তমানে যেসব সমস্যাগুলো বড় আকারে দেখা দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের অভাব। এছাড়া বিভাগভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, গবেষণার সুযোগের অপ্রতুলতা, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের অনুপস্থিতি, শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট, ল্যাব সংকট, আবাসন সমস্যা, পরিবহণ সংকট, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব, অ্যাকাডেমিক সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকাসহ পরীক্ষা মূল্যায়ণে গণহারে ফেল করিয়ে দেওয়া- এসব সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সমাধানহীনভাবে চলছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে নীলক্ষেত মোড়ে কর্মসূচির কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকভাবে তিনটি কর্মপরিকল্পনা বাস্তাবায়নের লক্ষ্যে সোমবার ঢাকার নীলক্ষেতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি আহ্বান করেছি।
তিনটি কর্মপরিকল্পনা হলো- ১. সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার অভিপ্রায়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে। ২. সংস্কার কমিটি অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সাত কলেজের সমন্বয়ে শুধু মাত্র একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন করবেন। ৩. সংস্কার কমিটি বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। যাতে করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সেশন জটিলতার কোনো ধরনের পরিবেশ তৈরি না হয়।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।