শালিকের প্রাণ বাঁচাতে ছুটে এল ফায়ার সার্ভিস
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে | প্রকাশিত: ৯ জুলাই ২০২১, ২১:০৭
চারিদিক অন্ধকারে নিমজ্জিত। কোথাও কেউ নেই। হটাৎ লম্বা মই দিয়েফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন ওপরে উঠছিলেন, তখন জড়ো হতে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা আগুন খুঁজতে থাকেন। কোথাও আগুন নেই। সবাই অবাক হয়ে দেখেন, শালিক পাখি উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের অভিযান।
এমন উদ্ধারকাজ দেখে কেউ বললেন, মহৎ কাজ। কেউ আবার হাসতে হাসতে হাঁটা শুরু করলেন। বুধবার রাতে ঈশ্বরদী উপজেলা সদরের দড়িনারিচা হরিজন কলোনিতে এভাবেই একটি চড়ুই পাখিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় বাসিন্দা মিলন কুমারের। প্রথমে তিনি পাখিটিকে সুতা থেকে ছাড়ানোর কথা ভাবেন। কিন্তু আশপাশে লম্বা কোনো বাঁশ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাই কিছুটা সংশয় নিয়েই ফোন করেন ফায়ার সার্ভিসে। ভাবছিলেন, ছোট্ট একটা পাখির প্রাণ বাঁচাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসবেন কি না।
কিন্তু ফোন পাওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যেই ঘটনাস্থলে হাজির হয় ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি। মিলন কুমার ভাবেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হয়তো শালিক পাখির কথা বুঝতে পারেননি। তাই দুটি গাড়ি এনেছেন। তিনি তাঁদের বলেন, তিনি কিন্তু শালিক পাখিকে উদ্ধার করার কথা বলেছেন। আগুনের কথা বলেননি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাঁকে বললেন, শালিক পাখির কথা জানতে পেরেই তাঁরা এসেছেন। এরপর লম্বা মই দিয়ে উঠে শিমুল গাছের ডালে বেঁধে থাকা সুতাটি কেটে দেন তাঁরা। তখন রাত ৮টা বেজে ৪৫ মিনিট। সঙ্গে সঙ্গে আকাশে উড়াল দেয় পাখিটি।
এভাবেই বলছিলেন মিলন, ‘আমি তো ভয়ে ভয়ে ফোন দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, তাঁরাও তাচ্ছিল্য করবেন কি না। কিন্তু তাঁরা অবহেলা করেননি। অথচ একটা সময় ছিল যখন মানুষ মরতে থাকলেও এত দ্রুত ফায়ার সার্ভিস আসত না। এখন তাঁরা খুব আন্তরিক। পাখিটিকে মুক্ত করে তাঁরা এটি প্রমাণ করলেন।’
ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, পাখির একটি পায়ে সুতা আটকে ছিল। তাঁদের একটি ইউনিট পাখিটি মুক্ত করার অভিযানে নেমেছিল। সাব অফিসার বাকি বিল্লাহের নেতৃত্বে ৭ জন সদস্য একযোগে কাজ করে পাখিটিকে মুক্ত করেছেন।
আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস এখন দ্য লাইফ সেভিং ফোর্স। শুধু মানুষই নয়, প্রত্যেকটা প্রাণেরই মূল্য আছে। প্রতিটি প্রাণ রক্ষা আমাদের কর্তব্যের ভেতরেই পড়ে। বিষয়টি এভাবে মাথায় নিয়েই আমরা কাজ করি। ছোট্ট শালিক পাখিটিকে মুক্ত করতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে।’ পাখির প্রতি সবার এমন ভালোবাসায় মুগ্ধ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওরাও হাসবে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মিনহাজুল ইসলাম।
তিনি বললেন, ‘কেউ পাখি মারলে সেখানে পুলিশ ডাকা হলে লোকজন হাসাহাসি করে। বলে, পাখি মরলে কী হবে! ঠিক এই সময়ে পাখির প্রাণ রক্ষায় ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করা এবং ফায়ার সার্ভিসের এই ভূমিকা সবার জন্য অনুকরণীয়।’
এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১
বিষয়: পাবনা
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।