বাগেরহাটের বেতাগায় জমে উঠেছে পশুর হাট
বাগেরহাট থেকে | প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২১, ০০:১১
বাগেরহাটের ফকিরহাটে জমে উঠেছে বেতাগা পশুর হাট। শনিবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকেই হাটে দেশি-বিদেশি নানা জাতের গরুর পাশাপাশি ছাগল ও মহিষ বিক্রি হচ্ছে।
তবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মানছেন না ক্রেতা-বিক্রেতাসহ দর্শনার্থীরা। প্রশাসন কর্তৃক জরিমানার পরেও পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম।
দুপুরে বাগেরহাট জেলার সব থেকে বড় পশুর হাট ফকিরহাটের বেতাগায় প্রচুর গরু ও মানুষের ভিড় দেখা যায়। ক্রয়-বিক্রয়ও ছিল ভালো। বড় বড় গরুর পাশাপাশি ছাগল, মহিষও ছিল হাটে। কেউ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউ বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসছেন।
কেউ আবার অপেক্ষায় কাঙ্ক্ষিত দামে আদরের পশু বিক্রির। উপজেলা প্রশাসন ও ইজারাদারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকিং করা হচ্ছে। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। পশু ক্রয়-বিক্রয়ের পরে পাশ পারমিট গ্রহণের ঘরেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।
হাটে গরু বিক্রি করতে আসা গৃহস্থ মো. ইব্রাহিম শেখ বলেন, ৬ ও ৭ মণ ওজনের ২টি ষাঁড় নিয়ে এসেছি। ক্রেতারা গরু দেখলেও, উপযুক্ত দাম বলছেন না। উপযুক্ত দাম পেলে বিক্রি করে দেব বলে জানান তিনি।
শরণখোলা থেকে ৪৭টি গরু নিয়ে বেতাগার হাটে এসেছেন ব্যাপারী আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, বাচ্চা ও ষাঁড় মিলে ৪৭টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। ১৫টির মত বিক্রি করেছি। সামান্য লাভ হয়েছে। কিন্তু সবগুলো যদি আজকে বিক্রি করে যেতে পারি, তাহলে ভালো আয় হবে। না হলে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে একটু কষ্ট হয়ে যাবে।
ব্যাপারী ইকবাল মোড়ল বলেন, ৬টা গরু নিয়ে এসেছি। ৪টা বিক্রি করেছি। তবে ছোট গরুর চাহিদা অনেক বেশি।
গরু ক্রেতা বাবুল মোল্লা বলেন, হাটে আসলাম। অনেকক্ষণ ঘুরে কালো রংয়ের একটি গরু ক্রয় করেছি। বিক্রেতারা অনেক বেশি দাম চায়, দরাদরি করে কিনতে হয়।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মাস্ক না পড়ার কারণ জানতে চাইলে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলেন, গরুর হাটে আবার স্বাস্থ্যবিধি কিসের। মাস্ক পড়ে গরু কেনাবেচা হয় না। আবার অনেকে বলেন, প্রচন্ড গরমে মাস্ক পরে দরদাম করা যায় না। মাস্ক পরে কথা বললে ভিড়ের মধ্যে শোনা যায় না।
৩টা গরু নিয়ে মাস্ক ছাড়াই দাড়িয়ে আছেন হালিম নামে এক ব্যবসায়ী। মাস্ক পরেননি কেন, জানতে চাইলে বলেন, মাস্ক আছে পকেটে।
দুই কিশোরসহ গরু ক্রয় করতে এসেছেন মুজিবুর রহমান নামে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। বৃদ্ধের মুখে মাস্ক থাকলেও, কিশোরদের মুখে ছিল না। মাস্ক না পরার কারণ হিসেবে মুজিবুর রহমান বলেন, বছরে একবারই কোরবানি আসে। এই সময় এত নিয়ম কানুন দিলে হয়। বাচ্চারা আনন্দ করবে কিভাবে। তবে মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ার বিষয়ে হাটের ইজারাদার ও প্রশাসনের তৎপরতা ছিল।
বেতাগা হাটের ইজারাদার আনন্দ দাসের পক্ষে ভাই অসীত দাস বলেন, কোরবানি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত প্রথম হাটেই প্রায় ১০ হাজার গরু উঠেছে। বিক্রিও হয়েছে বেশ ভাল। আমরা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত ও মাস্ক পরানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছি। তবে কেউ মানছেন, আবার কেউ মানছেন না। আসলে অনেক লোকের সমাগম হলে একটু কষ্টসাধ্য ব্যাপার সবকিছু মানানো।
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম বলেন, ফকিরহাটে ২টি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। ২টি হাটই আজ চালু হয়েছে। প্রতিটি হাটে আসা মানুষের জন্য বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
দুই ধরনের স্বেচ্ছাসেবকরা হাতধোয়া ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিতে কাজ করছে। এরপরেও কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করায় আমরা কিছু মানুষকে জরিমানাও করেছি। সর্বোপরি মানুষ সচেতন না হলে, পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা খুবই কঠিন বিষয়।
তিনি আরও বলেন, কোরবানি একটা ত্যাগের বিষয়। আমরা পশু জবাইয়ের মাধ্যমে যেমন ত্যাগের মহিমা প্রকাশ করছি। তেমনি স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার ক্ষেত্রেও আমাদের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ঈদ উপলক্ষে গরুর হাটে ঘোরাঘুরি, বাইরে চা নাস্তা খাওয়া এসব অভ্যাস ত্যাগ করে করোনা পরিস্থিতিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১
বিষয়: বাগেরহাট
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।