টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড অগ্নিকাণ্ডের ১৭ বছরেও নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ

সুনামগঞ্জ থেকে | প্রকাশিত: ৮ জানুয়ারী ২০২৩, ১০:৩১

টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় অবস্থিত টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড বিস্ফোরনের ১৭ বছর পূর্তি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ১৭ বছরেও নেয়া হয়নি গ্যাস উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ। অযত্ন অবহেলায় মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান মেশিন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের অভিযোগ এখনও সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পায়নি ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘরের মালিকরা। ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারী দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একই বছরের ২৪ জুন দ্বিতীয় দফা অগ্নিকাণ্ড হয়। সেই থেকে প্রতিবছর ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন মনে রেখেছে টেংরাটিলাবাসী। ফেলে আসা এক বিভীষিকাময় দিনের দুঃসহ স্মৃতি টেংরাটিলার প্রতিটি মানুষকে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। স্থানীয়দের অভিযোগ গ্যাস উত্তোলন আহরণ বন্ধ থাকায় বুদ বুদ আকারে গ্যাস বের হয়ে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

সরজমিনে গ্যাস বিস্ফোরিত এলাকা ঘুরে দেখা গেল, গ্যাস ফিল্ডের আশপাশে এখন সুনসান নীরবতা। অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনার ১৭ বছরেও বন্ধ হয়নি টেংরাটিলার গ্যাসফিল্ডের গ্যাস উদগীরণ। গ্যাসকূপের মরিচা পড়ে তিলে তিলে নষ্ট হচ্ছে গ্যাসফিল্ডে পরিত্যক্ত অবস্থায় অবহেলা অযত্নে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি নানা মেশিনারিজ ও লোহার মূল্যবান পাইপ। পশ্চিম পাশের ঢেউ টিনের বেড়া ভেঙে যাওয়ায় গরু ছাগল ও বাইরের মানুষ অবাধে প্রবেশ করেছে। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত রয়েছে টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ড।

আরও পড়ুন : ফকিরহাটে বাল্য বিবাহের দায়ে বরের ১ বছর কারাদণ্ড

জানা যায়, টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরণের পর আশপাশের লোকজনদের সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে কিছুদিন পরই নাইকো তাদের মূল সরঞ্জামাদি নিয়ে গ্যাস ক্ষেত্র থেকে চলে যায়।

এই গ্যাস ফিল্ডের মোট আয়তন প্রায় ৫৮ একর। দু’দফা গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরণে টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডের প্রোডাকশন কুপের রিগ ভেঙে প্রচন্ড গর্জনে কেপে উঠে দোয়ারাবাজার ও ছাতক শহর। এই ভয়াবহ কম্পনসহ ২শ’ থেকে ৩শ’ ফুট পর্যন্ত আগুনের লেলিহান শিখা ওঠানামা করতে থাকে। দুই দফা বিস্ফোরণে গ্যাসফিল্ডের মাটির ওপরে ৩বিসিক গ্যাস পুড়ে যাওয়া এবং ৫.৮৯থেকে কমপক্ষে ৫২বিসিক গ্যাসের রিজার্ভ ধ্বংস হওয়াসহ আশপাশের টেংরাটিলা, আজবপুর, গিরিশনগর, খৈয়াজুরি ও শান্তিপুরের মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গাছ-পালা মরে গিয়ে বিরান ভূমিতে পরিণত হয়। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে এলাকার পরিবেশ।

এখনও ওই এলাকায় গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরণের কথা মনে হলে আঁতকে উঠেন। গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরনের পর টিউবওয়েলের পানিতে আসেনিক দূষণ, শ্বাসকষ্ট, শ্রবণশক্তি হ্রাস, চোখে কম দেখা, চর্মরোগসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে গ্যাস ফিল্ডে নাইকো কোম্পানীর কোন কার্যক্রম নেই। গ্যাস ফিল্ডের প্রধান ফটকে গিয়ে জানা গেলো এখানে ৬জন নিরাপত্তা কর্মী ছাড়া আর কেউ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা কর্মী বলেন, প্রতি মাসে ঢাকা থেকে এক কর্মকর্তা এখানে এসে কদিন থেকে চলে যান।

টেংরাটিলা গ্রামের বাসিন্দা মো.জামাল উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আগুন লাগনের ফর থাইক্কা কত টিভি আর পেপারে রিপোর্ট হইছে, আমরা যে কত কষ্টে বাইচ্ছা আছি, কই সরকার তো আমাদের খবর রাখে না।” আমার ক্ষতি হইছে প্রায় ২০ লাখ টাকার, সরকারী ভাবে আমাকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৯ হাজার টাকা। একই গ্রামের আবু হানিফা বলেন, গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরনের সময় আমার স্ত্রী গর্ভ অবস্থায় ছিলো। এসময় প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ঝাপ করতে গিয়ে আমার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়েছে। বসতঘরের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকার, আমাকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮ হাজার টাকা। আজবপুর গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, গ্যাসের আগুনে বাড়ী-ঘর গাছ-পালা পুড়ে গেছে। আমাকে ডিসি অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩ হাজার টাকা। অনেক দালালরা এখানে টাকা আত্নসাৎ করেছেন।

সুরমা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, টেংরাটিলা এখন অনেকটাই বৃক্ষ শুন্য। গ্যাস ফিল্ডে দূর্ঘটনার ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কথা রাখেনি কানাডিয়ান কোম্পানী নাইকো। ক্ষতিগ্রস্থরা এখনও পর্যাপ্ত পরিমানের ক্ষতিপূরন পায়নি।গ্যাসফিল্ড ট্র্যাজেডির সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো আমাদেরকে তাড়া করে বেড়ায়। আমরা বিশ্বাস করি এখনো এখানে অনেক গ্যাস মজুদ রয়েছে। সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আবারো গ্যাসক্ষেত্রটি চালু হবে বলে আশাবাদী। গ্যাসক্ষেত্রটি দ্রুত চালুর দাবি জানাই।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা প্রিয়াংকা জানান, টেংরাটিলা গ্যাস অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বাপেক্স যদি গ্যাসফিল্ড খননের উদ্যোগ নেয় তা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top