ফের অশান্ত পাহাড়

বান্দরবানে গোলাগুলিতে নিহত ৮

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৩৬

বান্দরবানে গোলাগুলি

বান্দরবা‌নের রোয়াংছ‌ড়ির সদর ইউনিয়নের খামতাম পাড়ায় পাহাড়ি দুই সশস্ত্র গ্রু‌পের গোলাগু‌লি‌তে আটজন নিহত হ‌য়ে‌ছেন। শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে রোয়াংছ‌ড়ির খামতাম পাড়া থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে অস্ত্রধারী আরেক পক্ষের গোলাগুলি হয়। প‌রে‌ শুক্রবার সকালে সেখা‌নে গি‌য়ে জলপাই রঙের পোশাক পরিহিত আট জনের মরদেহ দেখ‌তে পে‌য়ে পু‌লিশে খবর দেন তারা। পু‌লিশ ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে মরদেহগুলো উদ্ধার ক‌রে।

এদিকে কেএনএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, তাদের সাত সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত সাত সদস্য হলেন- ভান দু বম, সাং খুম, সান ফির খাং বম, বয়রেম বম, জাহিম বম, লাল লিয়ান বম ও লালঠা জার বম। তবে নিহত আরেক জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, পাহাড়ের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) মধ্যে গোলাগুলিতে এবার রক্তাক্ত হয়েছে পাহাড়। তবে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের দায়িত্বশীলরা বলছেন, কেএনএফের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই লাশ পড়েছে।

এদিকে, একসঙ্গে ৮টি লাশ পড়ার ঘটনায় পাহাড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন সশস্ত্র মহড়া জাগাচ্ছে নতুন শঙ্কাও। তবে হামলার ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। গঠন করা হয়নি তদন্ত কমিটি।

রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে দুটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনার পর আতঙ্কে বেশকিছু এলাকাবাসী পালিয়ে রোয়াংছড়ি উপজেলা সদরে অবস্থান করছেন। তাদের খাবার দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে রোয়াংছড়ি থানার ওসি আবদুল মান্নান জানান, রোয়াংছড়ি খামতামপাড়া এলাকা থেকে সেনা পোশাক পরিহিত ৮ জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গে আনা হচ্ছে। তবে কে বা কারা তাদের মেরেছে তা জানা যায়নি। মৃতদেহ কোন গ্রুপের তাও বলা যাচ্ছে না।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খবর পাই রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতামপাড়ায় কিছু মরদেহ পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, যতটুকু জেনেছি দুটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকায় মূলত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আধিপত্য বেশি। আধিপত্য নিয়েই কেএনএফের সঙ্গে তাদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। যারা নিহত হয়েছেন তাদের কারো নাম-ঠিকানা এখনও শনাক্ত করতে পারিনি। আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।

গত বছরের ৫ মার্চ এক ঘটনায় বান্দরবানের রুমাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় চারজন। এর আগে সেনাবাহিনীর একটি টহল দলের সঙ্গে জেএসএস সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনায় এক সেনাসদস্যসহ চারজন নিহত হন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে দুটি সশস্ত্র গ্রুপের সংঘর্ষে বান্দরবানের বাঘমারায় ছয়জন নিহত হয়। পুলিশের একটি সূত্র তখন জানিয়েছিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) দু’পক্ষের মধ্যে ওই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

এদিকে জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা তত বাড়ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা না হলে ভোটের আগে বান্দরবানে আরও লাশ পড়বে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top