কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় তিন দিনের লালন মেলা শুরু; বসেছে সাধুর হাট
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:৪৫
বাউল সম্রাট মরমী সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৩তম তিরোধান দিবস আজ। দিনটি উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের লালন স্মরণ উৎসব, সাধুসঙ্গ ও গ্রামীণ মেলা।
কালিগঙ্গা নদীর তীরে লালন আখড়াবাড়িতে এখন সাজ সাজ রব। বাউল-সাধু আর ভক্তদের মিলন মেলা। আজ সন্ধ্যায় এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এরইমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে পৌঁছে গেছেন লালন অনুসারি ও ভক্তরা।
উৎসবের তিন দিন লালনের আখড়াবাড়ির ভেতরে ও আশপাশের অঞ্চলজুড়ে বসেছে সাধুর হাট। বাউল ভক্তরা গাইবেন লালনের গান। পাশাপাশি চলবে গুরু-শিষ্যদের মাঝে ভক্তির আদান-প্রদান। এছাড়াও লালন মঞ্চে থাকবে সারারাত গানের আয়োজন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার আগে থেকেই সাধু-গুরুদের ভিড় বেড়েছে। লালন অ্যাকাডেমির নির্ধারিত স্থানে তারা ছোট দলে ভাগ হয়ে দরদ ভরা গলায় গেয়ে চলেছেন লালনের গান। আবার কেউ বা মেতে উঠেছেন গুরুবাদি বাউল ধর্মের নিগূঢ় তত্ত্ব কথার আলোচনায়। কেউ রান্না করছেন, অনেকেই গাজা সেবন করছেন। এসেছেন দেশ বিদেশের নানা বয়সী দর্শনার্থীরাও।
বাউল ভক্তরা জানান, হৃদয়ের টানে প্রতি বছর এখানে ছুটে আসেন তারা। লালনের অহিংসার বাণী বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পারলেই কেবল সব আয়োজন সার্থক হবে বলে মনে করেন তারা।
দূর-দূরান্ত থেকে আগত লালন অনুসারি ও ভক্তরা অভিযোগ করেন, বছরে দুইবার লালন স্মরণ উৎসবের সময় জায়গা সংকটের কারণে কষ্টের মধ্যে সময় পার করতে হয় তাদের। তারা গ্রামীণ মেলার পরিসর কমিয়ে দিয়ে বাউল ভক্ত-অনুরাগীদের জন্য বসার জায়গা বাড়ানোর দাবি জানান। পাশাপাশি খেলাফতধারী বাউলদের সমাহিত করার জন্য জমির দাবিও জানান।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, লালন মেলা উপলক্ষ্যে মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছে। মাজার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
বাংলা ১২৯৭ সালের পহেলা কার্তিক সাধক পুরুষ বাউল সম্রাট লালন সাঁই দেহত্যাগ করেন। এরপর থেকে লালনের অনুসারীরা প্রতিবছর ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ দিনটি পালন করে আসছেন। প্রতিবছরের মতো এ বছরও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন আয়োজন করেছে ৩ দিনের অনুষ্ঠান।
লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি, যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে ফকিরি গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
লালন ১৭ অক্টোবর ১৭৭৪ সালে অবিভক্ত বাংলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তাঁর গান রচনা করেছেন। যুগে যুগে বহু সঙ্গীতশিল্পীর কণ্ঠে লালনের এই গানসমূহ উচ্চারিত হয়েছে।
লালনের জীবন সম্পর্কে বিশদ কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। তার সবচেয়ে অবিকৃত তথ্যসূত্র তার নিজের রচিত ২৮৮টি গান। লালন তাঁর কোনো গানে জীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য রেখে যাননি, তবে কয়েকটি গানে তিনি নিজেকে ‘লালন ফকির’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর লালন ১১৬ বছর বয়সে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেউড়িয়াতে নিজ আখড়ায় মারা যান। মৃত্যুর প্রায় একমাস পূর্ব থেকে তিনি পেটের সমস্যা ও হাত পায়ের গ্রন্থির সমস্যায় ভুগছিলেন।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।