৬ ঘণ্টা স্কুলের টয়লেটে আটকা, এ যেন ‘ছুটির ঘণ্টা’ সিনেমা

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২৪, ২০:২৬

ছবি: সংগৃহীত

শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘ছুটির ঘণ্টা’র কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। সাড়া জাগানো বাংলা সিনেমাটির গল্পে স্কুলের টয়লেটে আটকে পড়া এক শিশুর হৃদয়বিদারক পরিণতি কাঁদিয়েছে অনেককেই। তবে মাদারীপুরের ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত কোনো বেদনার কারণ হয়নি।

 

স্কুল ছুটি হয়েছে তাই তাড়াহুড়ো করে সবাই বাড়ি চলে গেছে। বিদ্যালয়ের দপ্তরিও শ্রেণিকক্ষ ও বাথরুমের দরজা বন্ধ করে চলে যান। এর আগেই টয়লেট আটকা পড়ে প্রথম শ্রেণির ছয় বছরের এক শিক্ষার্থী। ছয় ঘণ্টা বাথরুমে আটকা থাকার পর সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের ৯নং পাঁচখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে এ ঘটনা। পরে অসুস্থ অবস্থায় শিক্ষার্থী রাফিন হোসেনকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় জেলা সদর হাসপাতালে। রাফিন একই এলাকার মৃত নুরুল হকের ছেলে। শনিবার (১৮ মে) বিষয়টি জানাজানি হলে সমলোচনার ঝড় ওঠে এলাকা জুড়ে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে সহপাঠীদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে আসে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের টয়লেটে যায় সে। শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষা থাকার কারণে সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যায়। ছুটির ঘণ্টা পড়লে শ্রেণিকক্ষে থাকা সবাই বাড়িতে চলে যায়। পরে বিদ্যালয়ের দপ্তরি খোকন খান শ্রেণিকক্ষ ও টয়টেলের দরজা তালাবদ্ধ করে চলে যান। এতে টয়লেটের ভেতর আটকা পড়ে প্রথম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী।

পরে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে রাফিন। কিন্তু রাফিনের ডাক কেউ শুনতে পায়নি। শিক্ষার্থী দুপুরের পর বাড়িতে না গেলে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া এক পথচারী শিশুটির কান্নাকাটি শুনে কাছে ছুটে যান। পরে টয়লেটের ভেতর শিশুটি আটকা পড়েছে বুঝতে পেরে তালা ভেঙে রাফিনকে উদ্ধার করা হয়। গুরুতর অবস্থায় প্রথম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।

বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রওশন আরা বেগম বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। এ ঘটনা কেউ ইচ্ছাকৃত করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, কেন এমন ঘটনা ঘটেছে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একটি শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের সঙ্গে এমন ঘটনা কাম্য নয়।

জেলা শিশু একাডেমির কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, এমন ঘটনা ১৯৮০ সালের শিশুতোষ চলচ্চিত্র ছুটির ঘণ্টা মতো। বিষয়টি দুঃখজনক ও কষ্টদায়ক। এ ঘটনার দায় প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরি কেউই এড়াতে পারেন না। তাদের সবার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি নিয়মিত মামলা হওয়া উচিত।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top