ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের উদ্বোধন

সুজন হাসান | প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২৪, ১৮:৩২

ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম পরিবহণের জন্য রোববার (৯ জুন) থেকে চালু হয়েছে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’। বিকেল ৪ টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের উদ্বোধন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল জোনের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস।

সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এ বছর যমুনা সেতুর পরিবর্তে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে ছাড়ার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও রাজশাহীসহ ১৫টি স্টেশনে আম তোলা হবে। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ২টা ১৫ মিনিটে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ছয়টি লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে প্রতিদিন আম পরিবহন করা যাবে ২৮ দশমিক ৮৩ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত এক কেজি আমের ভাড়া দিতে হবে ১ টাকা ৪৭ পয়সা। রাজশাহী থেকে ১ টাকা ৪৩ পয়সা।

ছয়টি লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে আম পরিবহন করা যাবে ২৮ দশমিক ৮৩ টন। তবে এবার ট্রেন যাবে পদ্মা সেতু হয়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এ ট্রেন। যাত্রা পথে রহনপুর স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, আব্দুলপুর, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা স্টেশনসহ মোট ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। এ ট্রেন ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ২টা ১৫ মিনিটে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম পরিবহনে ভাড়া লাগবে ১ টাকা ৪৭ পয়সা, রাজশাহী থেকে ১ টাকা ৪৩ পয়সা, পোড়াদহ থেকে ১ টাকা ১৯ পয়সা, রাজবাড়ী থেকে ১ টাকা ৭ পয়সা, ফরিদপুর থেকে ১ টাকা ১ পয়সা এবং ভাঙ্গা থেকে ৯৮ পয়সা। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৮ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছে। ট্রেন ভাড়া পেয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে তিন হাজার ৯৯৫ টন আম পরিবহন করা হয়েছে। এ থেকে রেলের আয় হয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা।

গত চার বছরে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসা করতে তেল খরচ হয়েছে ৯২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ফলে এ কয়েক বছরে ট্রেনের লোকসান হয়েছে ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ টাকা।

তবে আম ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলেন, ট্রেনে প্রতি কেজি আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় পাঠাতে খরচ হয় এক টাকা ৩২ পয়সা। ট্রেনে খুব কম খরচে আম পরিবহন করা গেলেও বারবার ওঠানামা করার কারণে ঝামেলা বেশি হওয়ায় সড়কপথ ও কুরিয়ারকে বেছে নেন ব্যবসায়ীরা।

২০২০ সালের ৫ জুন থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ৪৬ দিন চলেছে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর ট্রেনে এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন আম পরিবহন করা হলেও কোরবানির পশু পরিবহন হয়নি। ২০২১ সালের ২৭ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৫০ দিন চলেছিল ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর দুই হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন আম পরিবহন করা হয়েছিল।

২০২২ সালের ১৩ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সাত দিন চলে এ স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর ১৭৯ মেট্রিক টন আম, ৩৬টি গরু ও ১৬০টি ছাগল পরিবহন করা হয়। ২০২৩ বছর ৮ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত ১৮ দিন স্পেশাল ট্রেন চলেছে। এ বছর ৩৮২ মেট্রিক টন আম পরিবহন করা হয়।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, রেলওয়ের লোকসান হলেও আম চাষি,ব্যবসায়ী ও খামারিদের সুবিধার্থে এ ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, স্থানীয় আম চাষিদের উদ্বুদ্ধ করে ট্রেনে আম পরিবহনের মাত্রা বাড়ানো গেলে কমে আসবে লোকসানের পরিমাণ। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে সাধারণত ছয়টি ওয়াগন থাকে। আমরা এবারও আমচাষী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবো। ২০২৩ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের সঙ্গে অতিরিক্ত দুটি ওয়াগন যুক্ত করে কোরবানির পশু পরিবহনের ব্যবস্থা করে রেলওয়ে। প্রতিটি ওয়াগনের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৩০ টাকা।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top