মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

হাজী ও নান্না বিরিয়ানির নামে প্রতারণা

নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৮

সংগৃহীত

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে দীর্ঘদিন ধরে ‘হাজী বিরিয়ানি হাউস’ ও ‘নান্না বিরিয়ানি হাউস’ নাম ব্যবহার করে দুটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যে প্রতারণা চালিয়ে আসছে। রাজধানীর জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নাম নকল করে তারা নিম্নমানের ও স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ খাবার বিক্রি করছে। এতে জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি ভোক্তাদের আস্থাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে—প্রশাসনের শিথিল নজরদারিই এ অবৈধ কর্মকাণ্ডকে আরও বেপরোয়া করেছে।

স্থানীয় অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ও উপজেলা পরিষদ মার্কেটের পাশে সামান্য নাম পরিবর্তন করে এসব প্রতিষ্ঠান পুরান ঢাকার জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর নাম ব্যবহার করছে। ভোক্তা অধিকারকর্মীরা বলছেন, এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত প্রতারণা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রান্নাঘরের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও দুর্গন্ধময়। চারদিকে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে আছে, বাসনপত্র অপরিচ্ছন্ন, আর পচা ও নোংরা পরিবেশে মাংস–চাল সংরক্ষণ করা হচ্ছে। মাছি ও পোকামাকড়ের উপদ্রব ছিল স্পষ্ট।

ডা. হাফিজুর রহমান বলেন,

“এ ধরনের খাবার গ্রহণে ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, টাইফয়েড, রক্ত বমি এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।”

 

চরভদ্রাসন উপজেলা ক্যাব সভাপতি জয়নুল আবেদিন কামাল বলেন,

“মানুষ বুঝতে না পেরে ভুয়া ‘হাজী’ ও ‘নান্না’ বিরিয়ানির দোকানে ঢুকে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। এর ফলে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে মানুষের মনে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগ জরুরি।”

উপজেলা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ খান জানান,

“এই দুই প্রতিষ্ঠান ভুয়া নাম ব্যবহার করছে—এটি সত্য। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের কোনো ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়নি।”

স্থানীয় ব্যবসায়ী কাজী তায়েব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,

রমজান মাসে অভিযোগ করার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা খাতুনের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু যাওয়ার আগেই দলের একজন সদস্য দোকানদারকে খবর দিয়ে দেন। ফলে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায় মালিক। এরপর আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন,

“বাজারের রাস্তায় দাঁড়িয়েই অনেক হোটেল খাবার রান্না করে—এটি সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর।”

হাজী বিরিয়ানির নামে খাবার খেয়ে প্রতারিত হয়েছেন লোহারটেক গ্রামের ইমরান বেপারী। তিনি বলেন,

“এটি পুরান ঢাকার আসল হাজী বিরিয়ানি নয়। আসলটির গন্ধই আলাদা। বহুদিন ধরে অনিয়ম চললেও প্রশাসনের দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেই।”

রেস্তোরাঁর কর্মীরাও স্বীকার করেছেন, আসল ‘হাজী’ বা ‘নান্না’ বিরিয়ানির সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র নেই, বরং শুধু ব্র্যান্ডের সুনাম ভাঙিয়ে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যেই এই নাম ব্যবহার করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা খাতুন বলেন,

“এমনটি করলে তা প্রতারণার শামিল। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক দাবি করেছেন—“তাদের সব কাগজপত্র রয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী নিম্নমানের খাদ্য বিক্রি, প্রতারণা এবং নাম ও ব্র্যান্ড অপব্যবহার—সবই গুরুতর অপরাধ। কিন্তু আইন প্রয়োগের দুর্বলতায় এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠান নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

এনএফ৭১/ওতু



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top