২৭ মার্চ গোপালগঞ্জের
শ্রীধাম ওড়াকান্দির ঠাকুরের বাড়ী যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী
গোপালগঞ্জ থেকে | প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২১, ২২:২৬
আগামী ২৭ মার্চ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র তীর্থস্থান ঠাকুর বাড়ী যাচ্ছেন ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ সফরে তিনি ঠাকুর বাড়ীর সদস্য ও মতুয়া নেতাদের সাথে মত বিনিময় করবেন।
ইতিমধ্যে মোদীর আগমন উপলক্ষে ঠাকুর বাড়ীতে চলছে উন্নয়নমূলক কাজ। মোদীর আসার খবরে খুশি ঠাকুর বাড়ীর সদস্যরাসহ এলাকাবাসী। এ সফরকে ঘিরে ভরতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধি দল ঠাকুর বাড়ী পরিদর্শন করার পরপরই গোয়েন্দা নজরদারীতে নেয়া হয়েছে।
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গোপালগঞ্জ সফর নিয়ে এক প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন এ সভার আয়োজন করে।
জানাগেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে আগামী ২৭ মার্চ বাংলাদেশে আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ সফরকালে তিনি ২৭ মার্চ প্রথমে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিদর্শন করবেন। এরপর তিনি গোপালগঞ্জে কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়ী পরিদর্শন করবেন। সেখানে তিনি শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ও গুরচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পূঁজা আর্চনা করে আশির্বাদ নিবেন।
মোদীর ওড়াকান্দির ঠাকুর বাড়ীর সফরকে কেন্দ্র করে ঠাকুর বাড়ীতে চলছে উন্নয়নমূলক কাজ। বিভিন্ন মন্দির করা হচ্ছে সংস্কার। ঠাকুরবাড়ির পাশের রয়েছে দুটি মাঠ। আর মাঠে তৈরী করা হচ্ছে হেলিপ্যাড। সেখানে নামবে নরেন্দ্র মোদীকে বহন করা হেলিকাপ্টার। তবে নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবিত এ ওড়াকান্দি সফর অবশ্য অনেকটা রাজনৈতিক বলে মনে করছেন কেউ কেউ। পশ্চিমবঙ্গের বিধা্ন সভার নির্বাচনে মতুয়া বক্তদের ভোট টানতে তিনি ওড়াকান্দির ঠাকুর বাড়ী আসছেন বলে অনেকেইমনে করছেন।
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গোপালগঞ্জ সফর নিয়ে এক প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন এ সভার আয়োজন করে।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বিকাল ৩টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো: ইলিয়াছুর রহমান, কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর, গোপালগঞ্জ পৌর মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু, টুঙ্গিপাড়া পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুলসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা ও জন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর নিরাপত্তার সাথে নির্বঘ্ন করতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এলাকাবাসী গোবিন্দ কির্ত্তনিয়া ও ছবি রানী বিশ্বাস বলেন, ছাকুর বাড়ী বিশ্বের দলিত সম্প্রদায় মতুয়া ভক্তদের এক তীর্থভূমি। প্রতি বছর মতুয়া ভক্তরা পূর্ণ্যলাভের আশায় এ তীর্থ ভূমিতে আসেন। এখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসবেন এতে আমরা অনেক আনন্দিত। এ সফরে দুই দেশের আন্তরিকতা বাড়বে বলে মনে করছের তারা।
ঠাকুর বাড়ির সদস্য অমিতাভ ঠাকুর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঠাকুর বাড়িতে আসছেন এটি আমাদের জন্য খুশির এবং গর্বের বিষয়। আমরা তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। তার আগমনে আমরা ধন্য হবো।
বাংলাদেশ মতুঁয়া মহাসংঘের মহাসংঘাতিপতি (সভাপতি) সীমা দেবী ঠাকুর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঠাকুর বাড়ীতে আসছেন এটা সকল মতুয়া ভক্তদের কাছে গর্বের বিষয়। মেদীকে বরণ করে নিতে নানা প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে ঠাকুর বাড়ীতে। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও উলু ও শংখের ধ্বনি মাধ্যমে বরণ করে নেয়া বিশ্বের ক্ষমতাধর এ নেতাকে।
ঠাকুর বাড়ীর অপর সদস্য পদ্মনাভ ঠাকুর বলেন, ভারতের বিজেপি দলের সংসদ সদস্য শান্তনু ঠাকুর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হেলিকাপ্টার যোগে ওড়াকান্দির ঠাকুর বাড়িতে আসবেন। পরে তিনি ঠাকুর বাড়ীর সদস্যদের সাথে কথা বলবেন। এরপর তিনি ঠাকুর বাড়ীর পাশের একটি মাঠে তিন শতাধিক নির্ধারিত মঁতুয়া নেতাদের সাথে মত বিনিময় করবেন।
কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ঠাকুর বাড়ীর সদস্য সুব্রত ঠাকুর বলেন, আগামী ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওড়াকান্দির ঠাকুর বাড়ীতে আসছেন। তার এ সফরকে ঘিরে ইতিমধ্যে ভারতীয় হাইকমিশনের ৯ জনের একটি প্রতিনিধি দল ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়ী ঘুরে গেছেন। এর পর থেকে পুরো ঠাকুর বাড়ী গোয়েন্দা নজরদারীতে নেয়া হয়েছে। ইতি মধ্রে ভারতের প্রধামমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীতে স্বাগত জানাতে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শ্রীধাম ওড়াকান্দির ঠাকুর বাড়ী। ১২১৮ বঙ্গাব্দের (১৮১১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই মার্চ) সালের ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীতে ব্রহ্মমুহূর্তে মহাবারুণীর দিনে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পূর্ণব্রহ্মা হরিচাঁদ ঠাকুর। পিতা যশোবন্ত ঠাকুরের পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। বাল্যনাম হরি হলেও ভক্তরা হরিচাঁদ নামেই তাকে ডাকতেন। ছোটবেলা থেকেই তার অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে পার্শবর্তী গ্রাম ওড়াকান্দি। ক্রমেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে শ্রীধাম ওড়াকান্দির নাম এবং সারা দেশের হিন্দু-সম্প্রদায়ের কাছে এটি পরিণত হয় তীর্থস্থানে। ৬৬ বছর বয়সে ১২৮৪ বঙ্গাব্দে জন্ম দিবসের একই তিথিতেই তিনি পরলৌকিকত্ব বরণ করেন।
এনএফ৭১/জেএস/২০২১
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।