লক্ষ্মীপুরে সংগ্রামী নারীর
৩ কন্যার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এলেন জেলা প্রশাসক
লক্ষ্মীপুর থেকে | প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২১, ২২:৩৯
লক্ষ্মীপুরের নৌকার মাঝি সংগ্রামী নারী মায়া বেগমের তিন কন্যার স্বপ্ন পূরণে সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন জেলা প্রশাসক। রবিবার বিকালে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ মায়া বেগমকে ৩০ হাজার টাকার নতুন নৌকা ও প্রধানমন্ত্রীর উপহার (১ লাখ ৭১ হাজার টাকার ঘর) দিয়ে বলেন, এ ধরণের অন্য কারো খোঁজ ফেলে তাদের পাশেও দাঁড়াবে জেলা প্রশাসন ।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের তালহাটি গ্রামের ওয়াপদা খালে খেয়া পারাপার করে জীবন সংগ্রামে লড়ছেন স্বামী পরিত্যক্তা মায়া বেগম। যাত্রীদের থেকে নেয়া টাকায় তিন কন্যা সন্তানকে নিয়ে টেনেহিঁচড়ে চলছিল তার সংসার। জানা যায়, তিন মেয়েকে নিয়ে স্বামীর সংসারে ছিলেন মায়া বেগম। প্রায় ৮-১০ বছর আগে হঠাৎ করে সংসার চালানোর অক্ষমতায় তাদের ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান তার স্বামী।
পরিবারের আর কেউ উপার্জনক্ষম না থাকায় সমাজের সাথে আপোষহীনভাবে সংগ্রামী হয়ে উঠেন তিনি। স্থানীয় তালহাটি গ্রামে নিজেদের বাড়ীতে সন্তানদের নিয়ে মায়ের ঘরের পাশে খুপরি ঘরে শুরু হয় মায়া বেগমের সংগ্রামী জীবন। শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরতে বৈঠা হাতে খালের উপর নৌকার মাঝি হলেন জীবন যোদ্ধা নারী। প্রতিদিন সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত যাত্রী পারাপার করে কোন রকমে চলছিল।
মায়ার বড় ও মেঝো মেয়ে চাঁদখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম ও ৭ম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। যে নৌকা দিয়ে তার সংসার চলে, সেটিও পুরানো হয়ে গেছে এখন। কোন সাহায্য মিলেনা বলে আক্ষেপ ছিল মায়ার। তবে দু‘চোখ ভরা স্বপ্ন ছিল, একদিন তার তিন কন্যা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারি চাকরি করে মায়ের কষ্ট লাঘব করবে। এলাকাবাসীও তাদের সহায়তা করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক সাহার্য্যের জন্য এগিয়ে আসেন।
মায়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বেশ খুশি ও আনন্দিত হওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। রবিবার বিকালে তালহাটি গ্রামে গিয়ে মায়া বেগমকে ১টি নতুন নৌকা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক। এসময় কিছুক্ষণ নৌকায় চড়েন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন জেলা প্রশাসক ।
এসময় জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও যে নারী খেয়া পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করছে। সেটি উপলব্ধি করেই প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তাকে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার তিন কন্যার উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন পূরণের দায়িত্বও নেয়া হয়েছে। সরকারি এ সহায়তার মাধ্যমে তাদের দারিদ্র বিমোচনসহ তিন কন্যার উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে বলে জানান তিনি।
এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১
বিষয়: লক্ষ্মীপুর
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।