বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার অভিযোগে চাকরিচ্যুত ঢাবি শিক্ষক
ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুত মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক।
গতকাল বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
অধ্যাপক মোর্শেদ ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ জাতীয় একটি দৈনিকে ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। ওই নিবন্ধ প্রকাশের পরপরই বঙ্গবন্ধুর অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অধ্যাপক মোর্শেদকে বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দেন।
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ নিবন্ধে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান লেখেন, ‘আওয়ামী নেতাদের বেশিরভাগই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের পরিবার পরিজনসহ ভারতে চলে গেলেন এ দেশবাসীকে মৃত্যু ফাঁদে ফেলে দিয়ে নেতৃত্বহীন অবস্থায়। যাকে ঘিরে এ দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখত সেই শেখ মুজিবুর রহমানও। জাতির ওই সংকটকালীন মুহূর্তে ত্রাতারূপে আবির্ভূত হন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। দেশপ্রেমের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত এই টগবগে যুবকের কণ্ঠে ২৬ মার্চ রাতে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। স্বাধীনতার ডাক এসেছিল শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর, তার আগে নয়। আমার জানা মতে, তিনি কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি।’
পরে ২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ওই কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা উঠে আসে। পরে মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আইনি সুপারিশের জন্য গত বছরের ৩০ এপ্রিল ঢাবির সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। ওই ট্রাইব্যুনালের সুপারিশের ভিত্তিতেই তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদাদল।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬ ধারার ৩ উপধারা এবং ১ম স্ট্যাটিউটের ৪৫ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ এবং অদক্ষতা প্রমাণিত হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা যায়। অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান এমন কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত নন।`
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে ‘বিধিবহির্ভূত’, ‘নজিরবিহীন’ ও ‘ন্যাক্কারজনক’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে সাদাদলের শিক্ষকরা বলেন, ‘কেবলমাত্র ভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের অনুসারী হওয়ায় সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমরা এ ধরনের নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এনএফ৭১/আরআর/২০২০
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।