মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

১৪ বছরেও নিমতলী ট্র্যাজেডির শনাক্তকরণ হয়নি

সুজন হাসান | প্রকাশিত: ৩ জুন ২০২৪, ১৬:২৭

ছবি: সংগৃহীত

নিমতলী ট্রাজেডির ১৪ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার এ এলাকায় কেমিক্যাল বিস্ফোরণে অঙ্গার হয়ে মারা যান ১২৪ জন। আহত হয়েছিলেন দুই শতাধিক মানুষ। আগুনের লেলিহান শিখায় ছাই হয়ে যায় পুড়ে ২৩টি বসতবাড়ি, দোকানপাট ও কারখানা। ভয়ানক সে দিনে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী দেখেছিল নির্মম এক দৃশ্য। আপনজনকে চোখের সামনে পুড়তে দেখেছেন অনেকেই।

১৪ বছর আগে ঘটে যাওয়া বহুল আলোচিত এ ঘটনায় কাউকে দোষী করা যায়নি। শনাক্তই করা যায়নি ঐ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির জন্য দায়ী কারা। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়ের না হওয়ায় দায়ীদের বিচারের বিষয়টি আড়ালেই থেকে গেছে।

নিমতলীর ঘটনার পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি নানা নির্দেশনা জারি হলেও তা কার্যকর হয়নি আজও।

২০১০ সালের ৩ জুন রাত ৯টায় ভয়াবহ আগুনে ঝরে যায় ১২৪টি প্রাণ। রাসায়নিকের গুদামে রক্ষিত দাহ্য পদার্থের কারণেই পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ হতাহতের ঘটনায় থানায় শুধু সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। কোনো মামলা হয়নি। এতে আগুনের ঘটনার জন্য দায়ীদের শনাক্ত করা যায়নি।

এ ঘটনার পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম-কারখানা সরিয়ে নিতে গঠিত হয় দুটি কমিটি। সেই কমিটি কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে জায়গা ঠিক করার সুপারিশসহ উচ্চমাত্রার বিপজ্জনক ৫ শতাধিক রাসায়নিকের গুদামের তালিকা করে প্রতিবেদন দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু নিমতলী থেকে সরলেও এখনো সরেনি পুরান ঢাকার অন্য স্থানের রাসায়নিকের গুদাম।

দেশের ইতিহাসের অন্যতম বড় দুর্ঘটনা ধরা হয় নিমতলী ট্র্যাজেডিকে। ১১৯ জন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সেই হৃদয়বিদারক দিনের ১৪ বছর পূর্ণ হলো আজ। 

২০১০ সালের ৩ জুন রাজধানীর নিমতলিতে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছিলেন দুই শতাধিক মানুষ। আগুনের লেলিহান শিখায় ছাই হয়ে যায় পুড়ে ২৩টি বসতবাড়ি, দোকানপাট ও কারখানা। 

ভয়ানক সে দিনে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী দেখেছিলো নির্মম এক দৃশ্য। আপনজনকে চোখের সামনে পুড়তে দেখেছেন অনেকেই। 

৩ জুন রাত সাড়ে ১০ টায় লাগা ওই আগুন জ্বলেছিলো তিন ঘণ্টারও বেশি সময়। আগুন নিয়ন্ত্রণ, নির্বাপনের পর শুরু হয় উদ্ধার কাজ। নিহতদের কঙ্কালসার নিথর দেহ, আর্তনাদ জড়িত আহতদের একে একে উদ্ধার করে উদ্ধারকারীরা। ৪ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার কাজ শেষ হয়। মর্মান্তিক এই ঘটনায় কেঁদে উঠেছিলো সারাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে ৫ জুন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়। 

এ ঘটনার পর যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পায়, তাতে উঠে আসে আগুন লাগার মূল কারণ। রাসায়নিকের গুদামে থাকা দাহ্য পদার্থের কারণেই সেই ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। 

অগ্নিদগ্ধ নিমতলি তার ক্ষত সারিয়ে উঠলেও এখনও সেখানেই রয়ে গেছে অজস্র কেমিক্যাল গোডাউন। 

নিমতলী ট্রাজেডির পর টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিলো। পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল রাজধানী থেকে রাসায়নিকের গুদাম-কারখানা সরিয়ে দেয়ার। গঠন করা হয় দুইটি কমিটিও। 

সেই কমিটি কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে জায়গা ঠিক করার সুপারিশ করে। একই সঙ্গে উচ্চ মাত্রার বিপজ্জনক পাঁচ শতাধিক রাসায়নিকের তালিকা করে শিল্প মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন জমা দেয়৷ 

তবে গাজী গরুর মতো সব কিছুই এখনও রয়ে গেছে কেতাবে। বাস্তবায়ন হয়নি কিছুই। পঞ্জিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে কেটে গেছে ১৪ বছর৷ মাঝে সেই পুরাণ ঢাকারই চুড়িহাট্টায় ঘটে গেছে আরেক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ইসলামবাগে আগুনের ঘটনাও নিয়োমিত। তবে কোনোভাবেই পুরাণ ঢাকা থেকে সরানো যাচ্ছে না কেমিক্যালের গোডাউন। 

জানা গেছে, রাজধানীর পুরাণ ঢাকায় রাসায়নিকের গুদাম ও দোকান রয়েছে প্রায় ২২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে অনুমোদন বা লাইসেন্স আছে মাত্র ৮০০টি গুদামের। এছাড়া বসতবাড়িতে অরক্ষিতভাবে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন কেমিক্যাল।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top