রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

বিসিএসের প্রশ্নফাঁসে যেভাবে জড়াচ্ছে তাহসানের নাম

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০২৪, ১৩:৪৫

ছবি: সংগৃহীত

বিসিএস প্রশ্ন ফাঁসকাণ্ডে দেশ তোলপাড়, চলেছে আলোচনা সমালোচনা। বিসিএস ও বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় একটি চক্র প্রশ্ন ফাঁস করে আসছে এমন সংবাদ প্রকাশের পর গ্রেপ্তার করা হয় পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৭ জনকে। আর এবার এই প্রশ্নফাঁসকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী তাহসান খানের মায়ের নাম।

এই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি সৈয়দ আবেদ আলী। এ আবেদ আলী ছিলেন সংগীতশিল্পী তাহসান খানের মা ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের গাড়ির চালক। তাহমিদা বেগম যখন পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন তার ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী।

তাহসান খানের মা ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম ২০০২ সালের ৯ মে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পরই ২৪তম (২০০২-২০০৩) বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে বড় প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। এমনকি সেই পরীক্ষাও বাতিল করা হয়।

২৪তম বিসিএসের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে সারাদেশে ওই ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রশ্ন ফাঁস সম্পর্কে প্রতিদিন লেখালেখি অব্যাহত থাকে। পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার প্রধানের নির্দেশে গোয়েন্দা সংস্থায় মাধ্যমে খোঁজ-খবর নেয়া হয়। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়ায় পর সরকারের শীর্ষ মহল থেকে পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে মত দেওয়া হয়। ২৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল করা হয়।

এদিকে, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক জানান, আমি পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের আগে পিএসসির সদস্য ছিলাম। আমি যোগদানের আগে ওই লোকের (আবেদ আলী) চাকরি গেছে বলে শুনেছি। ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম ও এটিএম আহমেদুল হক চৌধুরী যখন পিএসসি চেয়ারম্যান ছিলেন তখন আবেদ পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক ছিলেন। ইকরাম আহমদ যখন চেয়ারম্যান ছিলেন তখন আবেদ আলী বরখাস্ত হন। পরে তাকে চাকরিচ্যুতও করা হয়।

প্রফেসর ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম ছিলেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন-এর জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত অষ্টম চেয়ারম্যান। ২০০২ সালের ৯ মে তিনি পিএসসি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ২০০৭ সালের ৭ মে পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

১৯৯৭ সালের দিকে রাজধানী ঢাকার ইন্দিরা রোডের পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার একটি ব্যাচেলর মেসে থাকতেন আবেদ আলী। ওই মেসেই আবেদ আলীর পরিচয় হয় সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর এলাকার শাহিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। শাহিনের মামা মেজবাহ চাকরি করতেন সচিবালয়ে। শাহিনের মাধ্যমেই পিএসসিতে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি হয় তার।

প্রফেসর ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম যখন পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন, ততদিনে আবেদ আলী প্রমোশন লাভ করে পিএসসির চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক হন। সে সময় থেকেই মূলত আবেদ আলী প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘসময় ধরে তিনি একটি চক্রের সঙ্গে প্রশ্নফাঁস করে আসছিলেন। তবে, ওই সময়ে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিলেন। নন-ক্যাডারের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পিএসসির চাকরি থেকে ২০১৪ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

পিএসসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নন-ক্যাডারে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার পদের লিখিত পরীক্ষা ২০১৪ সালে ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে হলের বাহির থেকে অবৈধভাবে সরবরাহকৃত সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তরসহ ৪টি লিখিত উত্তরপত্র হাতেনাতে ধরা হয়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ আইনের ধারায় মামলা করা হয়। ওই মামলার তদন্তে আবেদ আলীর সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য-প্রমাণ মেলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে, তাহসানের মা তাহমিদা বেগমের গাড়িচালক প্রশ্নফাঁসে জড়িত এমন তথ্য সামনে আসার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনায় তাহসানের বিসিএসএ প্রথম হওয়ার খবর। নেটিজেনরা বলছেন, মায়ের আমলে বিসিএসএ প্রথম হয়েছিলেন তাহসান। পরে সেই পরীক্ষা বাতিল হলে পরবর্তীতে ভাইবা থেকে বাদ পড়েন তিনি। তবে এ বিষয়ে তাহসান খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান ও ১৯৬৭ সালে স্নাতক পাশ করেন এবং ১৯৭৭ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।  এদিকে সোমবার (৮ জুলাই) রাতে সিআইডির পক্ষ থেকে রাজধানীর পল্টন থানায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইনে এই মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ১৫। মামলায় আসামির সংখ্যা অর্ধ শতাধিক দেখানো হয়েছে। আর আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। খবর: দেশ রূপান্তর, ইত্তেফাকের। 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top