সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এডিসি কামরুল, স্ত্রীকে কিনে দিয়েছেন পাঁচটি জাহাজ
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৪, ২০:০৭
পুলিশের এসআই পদে যোগ দিয়ে সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হয়েছেন কামরুল হাসান। বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়িসহ তার ভাণ্ডারে যেন সবই আছে। এ সময়ের মধ্যে নিজে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়, পাশাপাশি স্ত্রী সায়রা বেগমকে পাঁচটি জাহাজ (বার্জ) কিনে দিয়েছেন তিনি। স্ত্রীর নামেও গড়েছেন অঢেল সম্পদ।
জানা গেছে, পুলিশে ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রামের ৮টি থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা কামরুল হাসান। মূলত ওই সময়েই বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।
সূত্রের তথ্যমতে, দৃশ্যত কোনো আয় না থাকলেও কামরুল হাসানের স্ত্রী সায়মা বেগমের ২ কোটি ৫৩ হাজার ২৪০ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সায়মা বেগমের আছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার স্থাবর ও ১ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ।
দুদক সূত্রে জানা যায়, কামরুল হাসানের চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে অভিজাত খুলশী আবাসিক এলাকায় ‘ফয়জুন ভিস্তা’ অ্যাপার্টমেন্টের অষ্টমতলায় সি-৭ নামে ২ হাজার ৫৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ও ১৩৬ বর্গফুটের গাড়ি পার্কিং রয়েছে। সোয়া সাত লাখ টাকায় ফ্ল্যাট ও মাত্র ২৫ হাজার টাকায় পার্কিং স্পেস কিনেছেন আয়কর নথিতে দাবি করলেও খুলশীতে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য তিন কোটি টাকার বেশি।
চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম নাসিরাবাদে সাত শতক জমির উপর চারতলাবিশিষ্ট বাড়ি করেছেন কামরুল হাসান। জমিসহ এই ভবন নির্মাণে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা খরচ দেখালেও নাসিরাবাদ এলাকায় এক শতক ভূমিই এক কোটি টাকার বেশি মূল্যে কেনাবেচা হচ্ছে। সেই হিসাবে ভূমি ও ভবনের বাজারমূল্য কমপক্ষে ৮ কোটি টাকা।
ঢাকার সাভারে ১০৭ শতক জায়গার উপর সাভার সিটি সেন্টার নামে ১২ তলা ভবনের চারজন অংশীদারের একজন এডিসি কামরুল। সেখানে তিনি কাগজ-কলমে সাত কোটি ৫২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এ ভবনের বেজমেন্টে ৯০টি, প্রথমতলায় ১৪০টি, দ্বিতীয় তলায় ১৪৬টি, তৃতীয়তলায় ৮৯টি ও চতুর্থ তলায় ১০৩টি দোকান এবং ৫ হাজার বর্গফুটের ফুডকোর্ট, পঞ্চম তলায় অফিস ও ষষ্ঠতলায় ৬৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাজারমূল্যে এ সম্পদের মূল্য শতকোটি টাকারও বেশি।
এদিকে সাভার সিটি টাওয়ার নামে একটি ১০ তলা আবাসিক ভবনেরও অংশীদার কামরুল। সেখানে ৫৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরের উত্তর হালিশহর, নাসিরাবাদ, চান্দগাঁও এলাকা শতাধিক ফ্ল্যাট ও দোকান রয়েছে কামরুলের। চট্টগ্রাম ও ঢাকার সাভারে ১৫৪ শতক জমি ও দুটি বাড়ি রয়েছে তার। পাশাপাশি কামরুলের ব্যাংকে ১ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকার বন্ড ও এফডিআর থাকার তথ্য উঠে এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে।
দুদকের কালো তালিকায় থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা
দুদকের কালো তালিকায় থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহকারী পরিচালক (এএসপি) আবুল হাশেম, চট্টগ্রামের আনোয়ারা সার্কেলের সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন, পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার মায়নুর রহমান, সিএমপি’র এডিসি (ক্রাইম) কামরুল হাসান, সহকারী পুলিশ কমিশনার এ বি এম সাহাদাৎ হোসেন মজুমদার, ডিবি পুলিশের ওসি আব্দুর রহমান, বন্দর থানার সাবেক ওসি মঈনুল হোসেন, কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি ও বর্তমানে চান্দগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবির, চান্দগাঁও থানার সাবেক ওসি খাইরুল ইসলাম, চান্দগাঁও থানার সাবেক ওসি তদন্ত মনিবুর রহমান।
এ ছাড়াও রয়েছেন বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ, পাহাড়তলী থানার সাবেক ওসি রঞ্জিত কুমার বড়ুয়া, সন্দ্বীপ থানার সাবেক ওসি মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম, বোয়ালখালী থানার সাবেক ওসি সাইরুল ইসলাম, কর্ণফুলী ও নগরীর আকবরশাহ থানার সাবেক ওসি মুহাম্মদ আলমগীর, সাবেক ওসি আনোয়ার হোসেন, আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পটিয়া থানার সাবেক ওসি রেফায়েত উল্যাহ চৌধুরী, লোহাগাড়া থানার সাবেক ওসি শাহজাহান, ট্রাফিক সার্জেন্ট মোহাম্মদ শেখ রাসেল।
আরও রয়েছেন সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মীর নজরুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক শাহ আলম, সাবেক ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক আবুল কাশেম চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক সুমন কুমার দে। এদের মধ্যে মীর নজরুল ইসলাম, শাহ আলম, আবুল কাশেম চৌধুরী, এ বি এম সাহাদাৎ হোসেন মজুমদার, সুমন কুমার দে, আবুল হাশেম, প্রদীপ কুমার দাশ, রেফায়েত উল্যাহ চৌধুরী, মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ইতিমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।