রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

‘একজনকে মারতে কতগুলো গুলি লাগে, স্যার?’

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:১৭

ছবি: সংগৃহীত
গত শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছোটাছুটি করছিলেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপপরিদর্শক ময়নাল হোসেন ও তার স্ত্রী। তাদের হাতে ছিল ১৭ বছরের ছেলে ইমাম হোসেন তাঈমের একটি ছবি। যাকেই পাচ্ছিলেন ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছিলেন, এই ছেলেকে তারা কি কোথাও দেখেছেন? খবর: ডেইলি স্টার 
 
 
ছেলের মরদেহ দেখে স্তব্ধ হয়ে যান ময়নাল হোসেন। তার স্ত্রী মেঝেতে পড়ে মূর্ছা যাওয়ার আগে চিৎকার করে বলছিলেন, 'ও আল্লাহ! আমার পোলারে কে মারল! তুই আমারে না বইলা কেন বাইর হইছিলি?'

কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে কলেজশিক্ষার্থী তাঈম শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে তাদের যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এর আগে তিন দিন ধরে যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষ চললেও তাঈমকে ঘরে আটকে রাখা যায়নি।

ঘণ্টাখানেক পর তাঈমের বাবা-মাকে কেউ ফোন করে জানায় যে তাদের ছেলেকে গুলি লেগেছে; তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ময়নাল বলেন, 'কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে আমার ছোট ছেলে তাতে যোগ দেয়। তাকে শুরু থেকেই না করেছিলাম আন্দোলনে যেতে। কারফিউয়ের মধ্যে তাকে বের হতেও না করেছিলাম। কিন্তু আমার কথা শোনেনি।'

মর্গে তাঈমের মরদেহ খুঁজে পাওয়ার পর ফোনে ময়নালকে বলতে শোনা যায়, 'স্যার, আমার ছেলেটা মারা গেছে। বুলেটে ওর বুক ঝাজরা হয়ে গেছে। স্যার, আমার ছেলে আর নেই।' তিনি প্রশ্ন রেখে তাকে বলেন, 'একজনকে মারতে কতগুলো গুলি লাগে স্যার?' ছেলে গুলিবিদ্ধ জানিয়ে ঊর্ব্ধতন কর্মকর্তার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে এসেছিলেন ময়নাল। ফোনে কথা বলার সময় অপর প্রান্তে কে ছিলেন তা নিশ্চিত করতে পারেনি দ্য ডেইলি স্টার।
 
এর আগে, ১৬ জুলাই রংপুরে ঘটে যায় আরেকটি ঘটনা। কোটা আন্দোলন চলাকালীন নিহত হন আবু সাঈদ। মৃত্যুর ঠিক আগে পুলিশবাহিনীর লাঠি-বন্দুকের সামনে দুহাত ছড়িয়ে অকুতোভয় সঈদের সেই ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়েছিল সমাজমাধ্যমে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ছাত্র আন্দোলন জোরদার করতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক টান করে থাকা সাঈদের সেই প্রতিবাদের ছবি।
 
এদিকে সরকার বলছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবী পূরণ হয়েছে। এছাড়া, তাদের আন্দোলন ছিনতাই হয়ে গেছে। অনুপ্রবেশকারীরা দেশের অগ্রগতি বিনষ্ট করতে নাশকতা করছে। কোটা আন্দোলনের সমন্বয়করাও বলছেন, নাশকতার সঙ্গে তাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। সকল প্রকার নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চান দেশের মানুষ।
 


বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top