গোলাপের সাম্রাজ্য বিদেশে, গড়েছেন সম্পদের পাহাড়
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৭ আগষ্ট ২০২৪, ১৬:১৪
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাণিজ্যের অন্যতম এই হোতাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর আদাবর থানা এলাকায় পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেনের আদালতে তাদের হাজির করে এ মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত রবিবার রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়া থেকে গোলাপকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর আদাবর থানা এলাকায় পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাকিব আল হাসান ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদসহ ১৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ৪০০-৫০০ জনকে। গত ২২ আগস্ট পোশাকশ্রমিক রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলাটি করেন।
মনোনয়ন বাণিজ্য ও কমিটি বাণিজ্যের অন্যতম হোতা: আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এর আগে দলের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবেও। দলে সম্মেলনের মাধ্যমে দপ্তর সম্পাদক হওয়ার আগেই তিনি প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক আবদুল মান্নান খানকে হটিয়ে হয়ে যান দপ্তর সম্পাদক।
সে সময় সহ-সম্পাদক পদ সৃষ্টি করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ উঠতি টাকাওয়ালাদের কাছে বিক্রি করেছেন সহ-সম্পাদককের পদ। একই সঙ্গে দলের দপ্তর সম্পাদক হওয়ার সুযোগ নিয়ে সে সময়ে স্থানীয় সরকার মনোনয়নে ব্যাপক বাণিজ্য করেছেন। কথায় কথায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে ফোন করে বাগিয়ে নিতেন টেন্ডার ও কাজ। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্নেহভাজন হওয়ায় তাকে সমীহ করতেন অনেক বাঘা বাঘা নেতা। কোনো কিছুই বলার সাহস দেখাতেন না।
বিদেশে সম্পদের পাহাড় : গত বছর অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, একাদশ সংসদে নির্বাচিত হওয়ার সাত মাস পর ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট আবদুস সোবহান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। যদিও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কোনো বিদেশি নাগরিকের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তাঁর ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তি (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) থাকলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় তিনি ইসিতে জমা দেওয়া হলফনামায় এসব সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি। এ নিয়ে ওই সময় ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিদেশে সম্পদের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ না থাকা ছাড়াও দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে আবদুস সোবহান নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
ওসিসিআরপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মোহাম্মদ আবদুস সোবহান নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি আলিশান ভবনে পাঁচটি কনডোমনিয়াম কিনেছিলেন, ওই সময়ে যার দাম ছিল প্রায় ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৫ কোটি টাকা)। এর কাছাকাছি কয়েকটি ভবনে তিনি আরও তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন, যার দাম ৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার (প্রায় ৭ কোটি টাকা)।
নিউইয়র্কের সম্পত্তির রেকর্ড অনুযায়ী, এসব সম্পত্তির সবই নগদ টাকায় কেনা হয়েছিল। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জ্যাকসন হাইটসে আরও একটি সম্পত্তি কিনেছেন প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা) মূল্যে। এতে বলা হয়, আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর মোহাম্মদ আবদুস সোবহান মিয়া কম বেতনের কাজ পিৎজা তৈরি, ওষুধের দোকানে, লাইসেন্স ছাড়া ট্যাক্সি চালাতেন বলে জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা। এসব কাজ থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে এভাবে অ্যাপার্টমেন্ট বা বাড়ি কেনা সম্ভব নয়।
সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই আবদুস সোবহান গোলাপ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নরওয়েতে পড়াশোনা করার পর তিনি আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে নিউইয়র্ক চলে যান। পরের তিন দশকে তিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশে এবং ক্ষমতায় না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে থেকেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালে তিনি দেশটির নাগরিকত্বও পেয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে তার সম্পত্তি কেনা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পাঁচ বছর পর। ২০১৮ সালে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগেই তিনি প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলারে নিউইয়র্কে আটটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।