রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জামিনে মুক্তি পেলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘সুইডেন’ আসলাম

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৩

ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম (৬২)। শেখ আসলাম ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ছাতিয়ার গ্রামের মৃত শেখ জিন্নাত আলীর ছেলে। মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় তিনি ওই কারাগার থেকে মুক্তি পান। বুধবার দুপুর ১২ টায় কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার লুৎফর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেলার লুৎফর রহমান জানান, “মঙ্গলবার তার জামিনের কাগজপত্র কারাগারে আসলে কারা কর্তৃপক্ষ জামিনের কাগজ পত্র যাচাই বাছাই শেষে রাত ৯টায় তাকে মুক্তি দেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। তার স্বজনরা কারা ফটকে অপেক্ষা করলে তিনি বের হয়ে স্বজনদের সাথে চলে যান।”

কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শীর্ষসন্ত্রাসী সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা আছে। তাঁর হাজতি নম্বর-৬৬৩/২০। ২০১৪ সাল থেকে তিনি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন।

সর্বশেষ ঢাকার তেজগাঁও থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। বিশেষ দায়রা মামলা নম্বর-২৯৬/২০১১ ও মেট্রো বিশেষ দায়রা মামলা নম্বর-১৬৮০/২০ হিসেবে মামলাটি রেকর্ড হয়। এ মামলায় জামিন লাভের পর তিনি মুক্তি পান।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আসলাম ওরফে শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলামের জামিনের কাগজপত্র গতকাল মঙ্গলবার কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছায়। কারা কর্তৃপক্ষ জামিনের কাগজ যাচাইবাছাই করে রাত ৯টায় তাঁকে মুক্তি দেয়। পরে তিনি স্বজনদের সঙ্গে কারাগার থেকে বের হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।

আসলামের বাবার নাম শেখ মোহাম্মদ জিন্নাত আলী। পরিবারটির আদি বাস ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আলগা ইউনিয়নের সাঁথিয়া গ্রামে। তবে পরিবারের কেউ এই গ্রামে থাকেন না। আসলামের বাবা-চাচারা স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকার ইন্দিরা রোডে বসবাস শুরু করেন। স্বাধীনতার পর জিন্নাত আলী ফার্মগেটে রড-সিমেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর তিন ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে আসলাম দ্বিতীয়।

আসলাম এসএসসি পাস করেন তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুল (বর্তমানে তেজগাঁও সরকারি বিদ্যালয়) থেকে। স্কুলজীবনে তিনি ভালো ফুটবল খেলতেন। আন্তজেলা স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলেছেন। তেজগাঁও কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েই বনে যান উঠতি রংবাজ। সে সময় ফার্মগেট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন আজাদ-বাপ্পি নামে দুই ভাই।

একদিন ফার্মগেটের নিউ স্টার হোটেল থেকে বাপ্পিকে জোর করে তুলে নিয়ে যান আসলাম ও তাঁর লোকজন। এরপর মারধর করে রাস্তায় ফেলে দেন। এতে দুই ভাইয়ের পতন ঘটে, উত্থান হয় আসলামের। শাকিল নামের এক কিশোর হত্যার মধ্য দিয়ে আসলামের এই কাজে হাতেখড়ি বলে অভিযোগ আছে।

১৯৮৭ সালে পূর্ব রাজাবাজারে নাজনীন স্কুলের ভেতরে মায়ের সামনে খুন হন শাকিল। তখন সুইডেন আসলামের সঙ্গে ছিলেন পূর্ব রাজাবাজারের সুমন ওরফে চাংখা সুমন, ব্যাটারি বাবু ওরফে কিলার বাবু, মণীপুরিপাড়ার বিআরটিসি কোয়ার্টারের আমজাদ হোসেন, পূর্ব রাজাবাজারের বাবু এবং কলাবাগানের সাবু।

এরপর ধীরে ধীরে সুইডান আসলাম হয়ে ওঠেন ঢাকার অন্ধকার জগতে অবৈধ কয়েকটি অত্যাধুনিক অস্ত্রের মালিক। সন্ত্রাসী হলেও এলাকার উঠতি তরুণ-কিশোরদের মধ্যে তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। জানা যায়, তাদের ব্যবহার করতেন অস্ত্র রাখা ও বহনের কাজে।

আসলামের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ইতি। তিনি সুইডেনপ্রবাসী ছিলেন। বিয়ের পর আসলামও সুইডেনে গিয়ে কয়েক বছর ছিলেন। সেই সূত্রে তাঁর নামের আগে জুড়ে যায় সুইডেন শব্দটি। একসময় ইতির সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়। জানা যায়, ইতি পরে আত্মহত্যা করেন।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top