জাতীয় সংসদে গড়ে ৩২ মিনিটে প্রতিটি বিল পাস : টিআইবি

ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক :

জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে বিল উত্থাপন এবং বিলের ওপর সদস্যদের আলোচনা ও মন্ত্রীর বক্তব্যসহ একটি বিল পাস করতে গড়ে প্রায় ৩২ মিনিট সময় ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-টিআইবি।

সংস্থাটির ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদের ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়কালে অনুষ্ঠিত প্রথম থেকে পঞ্চম অধিবেশনের ওপর প্রথমবারের মতো প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

‘পার্লামেন্টওয়াচ: একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম থেকে পঞ্চম অধিবেশন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০১৯ সালে ১৭তম লোকসভায় প্রতিটি বিল পাসে গড়ে প্রায় ১৮৬ মিনিট ব্যয় হয়।

অধিকাংশ সংসদীয় কমিটিতে বিলের ওপর আলোচনায় ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র ৪ শতাংশ সংসদ সদস্য (৩৫০ জনের মধ্যে ১৪ জন) বিলের ওপর নোটিস দিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। বাকি সদস্যদের ভূমিকা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এছাড়া, কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী বক্তব্য ও মতামত উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সদস্যদের একাংশের দক্ষতার ঘাটতি এবং অধিকাংশ সদস্যের পূর্বপ্রস্তুতির ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। বিল পাশের ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে সরকারি দল একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে।

বাজেট আলোচনায় সরকারি ও বিরোধী উভয়দলীয় সদস্যের বক্তব্যেই খেলাপি ঋণ, ব্যাংক খাতে অব্যাহত ভর্তুকি ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হ্রাস, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হলেও তা সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকদের কাছে প্রাধান্য পায়নি বলে গবেষণায় উঠে আসে।

‘অর্থবিল-২০১৯’ এর ওপর বিরোধীদলীয় সদস্যদের জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবও কন্ঠভোটে নাকচ হয়। অন্যদিকে সরকারদলীয় ও প্রধান বিরোধীদলীয় সদস্যদের একাংশ প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব সমর্থন করেছেন, যদিও তা অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান-পরিপন্থি।

গবেষণার মূল পর্যবেক্ষণে বলা হয়,  একাদশ জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার শরীক দল ৮৯ শতাংশ, প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ৭ শতাংশ এবং অন্যান্য বিরোধী সদস্যরা ৪ শতাংশ আসনে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।

সদস্যদের একাংশ তাদের হলফনামায় সঠিক তথ্য (আয়ের উৎস, সম্পদের পরিমাণ, নির্বাচনী ব্যয় ও ব্যয়ের উৎস ইত্যাদি) প্রদান করেন নি এবং ২১ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ছিল। এছাড়া, একাদশ সংসদের পাঁচটি অধিবেশনের ৬১ কার্যদিবসের সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় হয়েছে জনপ্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত কার্যক্রমে (৩১ শতাংশ), যেখানে আইন প্রণয়নে (বাজেট ব্যতীত) মাত্র ৯ শতাংশ সময় ব্যয় করা হয়েছে।

এদিকে, প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে, সংসদকে অধিকতর কার্যকর করতে ১২ দফা সুপারিশ প্রদান করেছে টিআইবি।

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অষ্টম ও নবম সংসদে সংসদ বর্জনের যে সংস্কৃতি, যা দেশবাসীর কাছে অগ্রহণযোগ্য ও হতাশাব্যঞ্জক একটি বিষয় ছিল। সেটি দশম ও একাদশ সংসদে অনেক চড়া দামে বন্ধ হয়েছে। এর জন্য এত বেশি মূল্য দিতে হয়েছে যে, মাথা ব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সংসদে পদ্ধতিগতভাবেই একটি কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “ ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বে নির্বাচনী মহাজোট যেটি হয়েছিল, তারই  একটি দলকে প্রধান বিরোধীদল হিসেবে পরিচিতি পেতে হয়েছে। সরকারকে জবাবদিহি করার ক্ষেত্রে এই প্রধান বিরোধী দলের বাস্তব ও জোরালো  ভূমিকা আমরা দেখতে পাইনি।

এনএফ৭১/এমকে/২০২০



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top