মাত্রাতিরিক্ত দূষণের পরও গঙ্গার পানি পরিশুদ্ধ থাকার কারণ
মুনাজ | প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০২৩, ০৭:৩৭
ভারতে সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার হয় যেসব নদী, তার মধ্যে গঙ্গা অন্যতম। শিল্প-কারখানার বর্জ্য, মানুষের ফেলে যাওয়া আবর্জনা থেকে শুরু করে নানা উৎসব-পার্বণে অতিমাত্রায় দূষিত হয় এ নদী।
কিন্তু এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, গঙ্গার পানিতেই দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ভাষ্যে, গঙ্গার পানিতে প্রচুর ব্যাক্টেরিওফাজ রয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন: নীলফামারীর চিলাহাটিতে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে আহত ১০
সম্প্রতি অন্য নদীগুলোর তুলনায় গঙ্গায় ব্যাক্টেরিওফাজ বেশি থাকার বৈজ্ঞানিক কারণ নিয়ে অনুসন্ধান করেছে ভারতের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এনইইআরআই)। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র বিজ্ঞানী কৃষ্ণা খাইরনার সংবাদমাধ্যম ডেক্কান হেরাল্ডকে বলেন, "গঙ্গা নদীতে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান ব্যাক্টেরিওফাজ ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করতে অন্যসব নদীর ব্যাক্টেরিওফাজের তুলনায় অধিক মাত্রায় কার্যকরী। আমরা এখনো গঙ্গায় ভাইরাসটি কেন বেশি কার্যকরী তার নির্দিষ্ট কারণ জানি না। তবে রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা নদীটির পলিমাটি নিয়ে অধিকতর গবেষণা করছি।
সাধারণত, ব্যাকটেরিওফাজ এক প্রকার ভাইরাস। ব্যাকটেরিয়াকে যা ধ্বংস করতে সক্ষম। সব নদীতেই কমবেশি তা থাকে। তবে গঙ্গার পানিতে ব্যাকটেরিওফাজ বেশি।
গঙ্গার তীরে ব্যাপক পূজা-পার্বণ, আচার-অনুষ্ঠান হয়। এতে নদীটিতে প্রচুর ব্যাকটেরিয়ার সমাগম ঘটে। তবে সেখানে বিদ্যমান ব্যাকটেরিওফাজ তা ধ্বংস করে দেয়। ফলে ভারসাম্য তৈরি হয়।
করোনা মহামারি শুরুর আগে বিজ্ঞানী খাইরনার ও তার সহযোগী গবেষকরা গঙ্গার প্রায় ৩৮টি ভিন্ন জায়গা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেন। 'ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা' প্রকল্পের অংশ হিসেবে তা নেয়া হয়। পরে যমুনা ও নর্মদার পানির সঙ্গে নমুনাগুলোর তুলনা করা হয়।
এতে দেখা যায়, গঙ্গার পানিতে প্রায় ১৪৩ ধরনের ব্যাকটেরিওফাজ আছে। যমুনা ও নর্মদার চেয়ে যা অনেক বেশি। দেড় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্যাকটেরিওফাজ গঙ্গায় প্রতিনিয়ত ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
বিজ্ঞানী খাইরনার বলেন, গঙ্গার পলিমাটি ব্যাকটেরিওফাজকে প্রায় তিন বছর রুম টেম্পারেচারে রাখে। ফলে ভাইরাসটি দীর্ঘদিন টিকে থাকে। সেই সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
নদীর পলিমাটিগুলোর রাসায়নিক ধরন সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করে শিগগিরই এই রহস্য উদঘাটন করা যাবে বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র: ডেক্কান হেরাল্ড
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।