শিশুর স্মার্টফোনে আসক্তি কমবে যেভাবে

লাইফস্টাইল ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৩:২৪

শিশুর স্মার্টফোনে আসক্তি কমবে যেভাবে

তথ্যপ্রযুক্তির এ সময়ে স্মার্টফোন নিত্যপ্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে অনলাইন ক্লাস, বিনোদন ও কার্টুন- এসবের কারণে শিশুদের সিংহভাগ সময় কাটে স্মার্টফোনে। এখন শিশুরা সাধারণত মোবাইল, টেলিভিশন, স্মার্টফোন, ট্যাব ও ইউটিউবে সময় কাটায়। এটি অনেকেই ভালোভাবে দেখে। কিন্তু এ প্রযুক্তির কারণে শিশুদের মধ্যে নানাবিধ বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে, এমনকি অতি অল্প বয়সেই তারা অ্যাডাল্ট বিভিন্ন কনটেন্ট দ্বারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এভাবেই শিশুগুলো মোবাইলে অ্যাপসগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে এবং বিপজ্জনক সাইটেও ঢুকে পড়ছে।

অভিভাবকদের এমন সামান্য ভুলে শিশুর বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের ফলে বাধাগ্রস্ত হয় শিশুদের মানসিক বিকাশ। শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি কমাতে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন-

১. দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিশুকে স্মার্ট ডিভাইসের সামনে থাকার অভ্যাস করুন। ওই সময়ের বাইরে স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখুন কোমলমতি শিশুকে। এ ছাড়া শিশু স্মার্টফোনে কী করছে বা কী দেখছে তার প্রতিও নজর রাখতে হবে।

২. শিশু যদি অনলাইনে ক্লাস করে, তাহলে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে সে কী করছে, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া স্মার্টফোন থেকে আপত্তিকর ওয়েবসাইটগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে ইন্টারনেট প্রোভাইডারদের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।

৩. প্রয়োজনে একসঙ্গে শিশুর সঙ্গে খেলুন বা ভিডিও দেখুন। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষণীয় ভিডিও শিশুর সঙ্গে বসে দেখতে পারেন। এতে সে একটু বড় হলে এসব ভিডিও দেখতে বেশি আগ্রহী হবে।

৪. প্রযুক্তির সুবিধা-অসুবিধা দুটোই সন্তানকে ভালো করে বুঝিয়ে বলুন। প্রযুক্তি নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক আলোচনায় সঙ্গী হোন নিজ সন্তানের। অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে কী বিপদ হতে পারে, সেসব নিয়ে খোলামেলা কথা বলুন।

৫. অবসর সময়ে শিশুর সঙ্গে গল্প করুন। শিশুরা ছোটবেলা থেকেই গল্প শুনতে এমনকি মাতৃগর্ভে থাকাকালে গল্প শুনলেও তার মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি পায়। তাই শিশুকে বেশি সময় দিতে হবে এবং তার সঙ্গে প্রচুর গল্প করতে হবে।

৬. আপনার ঘরের পরিবেশটা কেমন? চারদিকে কী ডিভাইস? ঘরে ঢুকতেই একটা বড় টিভি? আপনিও কি এক মিনিট পরপর ডিভাইস দেখেন? তা হলে এগুলো পরিবর্তন করতে হবে। কারণ শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। তারা প্রথম শিক্ষা পায় পরিবার থেকে। তারা সেই শিক্ষাটাই গ্রহণ করবে যা নিজের সামনে দেখবে। তাই মা-বাবাকে এক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার, যতটা সম্ভব তার সামনে মোবাইল বা ডিভাইস পরিহার করুন।

৭. ঘরের চারদিকে শিশুদের উপযোগী রঙ, তুলি, ছবি আঁকার জিনিস, কালার পেনসিল, বিভিন্ন মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট (বাঁশি, সেতার, ভায়োলিন) রাখতে পারেন। এতে করে সে একা থাকলেও ছবি আঁকার চেষ্টা করবে। মিউজিক বাজানোর চেষ্টা করবে।

৮. শিশুদের ঘরে অবশ্যই মিনি লাইব্রেরি তৈরি করা উচিত। অবসর সময়ে অভিভাবকের বই পড়ার অভ্যাস থাকলে সন্তানও তা রপ্ত করবে। আথবা খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস করুন, আপনাকে দেখেই তার মধ্যে এই অভ্যাসগুলো গড়ে উঠবে।

৯. প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসুন। শিশুদের প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়া খুব জরুরি। শিশুকে নিয়ে বাগানে বা প্রকৃতির মধ্যে খেলাধুলা করুন। লুকোচুরি খেলুন, ছোটাছুটি করুন, সময় কাটান তাতে শিশুরা সামাজিক হয়ে উঠতে পারবে। নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারবে। যারা শহরে থাকেন, তারা সপ্তাহে এক দিন বা মাসে দুই দিন শিশুকে নিয়ে প্রকৃতির কাছে যেতে পারেন। এতে শিশুর মানসিক বিকাশের উন্নতি হবে।

১০. শিশুদের ঘরের কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন। বিশেষ করে মায়েরা এ কাজটি করতে পারেন। আপনার সন্তানকে বলতে পারেন, আজকে তুমি আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করো। এতে আপনার সন্তান ঘরের কাজের প্রতি আগ্রহী হবে এবং মোবাইল আসক্তি থেকে সরে আসবে।

এনএফ৭১/এমএ/২০২১

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top