সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ কী?

প্রবল প্রতাপে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:৫৯

ছবি: সংগৃহীত

সংবাদবিজ্ঞানীরা কে, কী বললেনঃ

সাংবাদিকের ভূমিকা কী? আমেরিকার লুইজিয়ানার সিনেটর জন কেনেডি বলেছিলেন, সাংবাদিকের কাজ হলো সত্যকে খুঁজে বের করে তা রক্ষা করা। সত্য না থাকলে আস্থা থাকে না। আর আস্থা না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না।

পুলিৎজার জয়ী আমেরিকান সাংবাদিক ডেভিড এস ব্রোডার বলেন– কম্পিউটার দিয়েই পুরো যুদ্ধটা সেড়ে ফেলা সাংবাদিকতা নয়, ফিল্ডে যেয়ে তথ্য সংগ্রহ যাচাই বাছাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুতের কিছু বিষয় আছে। সাংবাদিক হুট করেই ঝাঁপিয়ে পড়েন না পুরোটা তাকে জানতে হয়।

থমাস জেফারসন একবার বলেছিলেন, আমাকে যদি এই বিকল্পটি দেওয়া হয় যে তুমি কি সংবাদপত্রবিহীন সরকার চাও, না সরকারবিহীন সংবাদপত্র চাও? তখন আমি পরেরটা বেছে নেব। জেফারসন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সংবাদপত্রের কথা বলেছিলেন।

ঠিক তার প্রায় ৫০ বছর পর ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সংবাদপত্র সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, চারটি আক্রমণাত্মক সংবাদপত্র হাজারটা বেয়নেটের চেয়েও ক্ষতিকর।

সংবাদপত্র যে প্রকৃত পক্ষে ফোর্থ স্টেট এ ধারণাটি মূলত শতাব্দী পুরনো। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের গ্যালারিতে উপস্থিত সংবাদপত্র প্রতিনিধিদের লক্ষ্য করে এডমন্ড বার্ক বলেছিলেন, পার্লামেন্টের তিনটি রাষ্ট্র রয়েছে। কিন্তু ওই যে দূরে সাংবাদিকদের আসন সারি সেটি হচ্ছে পার্লামেন্টের চতুর্থ রাষ্ট্র এবং আগের তিনটি রাষ্ট্রের চেয়ে তা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ!

নোয়াম চমস্কির মতে, গণমাধ্যম কাজ করে এলিটদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে।

ফ্র্যান্সের পত্রিকা ল্য মোন্দ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক উব্যের দ্য ব্যোভ মেরি বলেছিলেন, মিডিয়ার কোন্ খবর কিভাবে পরিবেশিত হবে বা আদৌ দর্শক-পাঠকের কাছে যাবে কিনা, এই জানানো এবং না জানানোর টানাপোড়েনে জন্ম নেয় অর্ধসত্য।

সাংবাদিকতা কাদের পেশা, কাদের নয়:

সাংবাদিকতা কখনই মূর্খজনের পেশা নয়। এটি আগাগোড়াই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষের পেশা। কারও মতে, সাংবাদিকতা যতটা না পেশা, তার চেয়ে বেশি নেশা, আবেগ ও ভালো লাগার একটা জায়গা। তবে সাংবাদিকের এই নেশা কেটে গেলে তিনি যতটা না সাংবাদিক থাকেন, তার চেয়ে বেশি হয়ে ওঠেন চাকরিজীবী।

সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ বলেছিলেন, সৎ সাংবাদিকের কোন বন্ধু থাকতে নেই। একজন ভালো সাংবাদিক বা সম্পাদক তার বন্ধুত্বের, সামাজিকতার সীমাটা জানবেন এবং সেটা মেনে চলবেন।

বলা হয়, একজন সাংবাদিক কারও ততটা কাছে যাবেন না, যতটা কাছে গেলে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হবে। আবার ততটা দূরেও যাবেন না, যতটা দূরে থাকলে সংবাদ থেকে বঞ্চিত হবেন।

তিনি হবেন নানা কাজের কাজী (jack of all trades)। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ- থাকবে তার নখদর্পণে। চোখ কান খোলা থাকবে, বিচার বুদ্ধি বিবেচনায় অন্ধ হবেন না। যুক্তিবোধ এবং প্রখর সংযম অপরিহার্য।

সাংবাদিক হতে হলে সংবাদের গন্ধ শোঁকার নাক থাকতে হবে। অবলোকনের চোখ থাকতে হবে। বোঝার জন্য মন থাকতে হবে। সংবাদমাধ্যমই হবে সাংবাদিকদের দিন-রাত।

সাংবাদিকতায় গুড কমিউনিকেটর হতে হবে। ব্যাপক সোর্স বিল্ডাপ করতে হবে। পাশাপাশি ভাষাগত দক্ষতা, অনুসন্ধানী মনোভাব, লেখালেখির দক্ষতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতার চর্চা (ঘটনার ক্ষুরধার বিশ্লেষণ) করতে হবে।

ভালো সাংবাদিক হতে হলে নিয়মিত সংবাদ বিষয়ক বই ও পত্রিকা পড়তে হবে। নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। সত্যানুসন্ধানের জন্য প্রচুর শ্রম দেয়ার মানসিকতা, সাংবাদিকতার প্রতিটি নীতিমালা শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুসরণ।

সাংবাদিক মানেই তাকে স্মার্ট হতে হয়। কেননা তাকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনতে হয়। হতে হয় প্রগতিশীল। নিজেকে নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এককথায় বললে, নতুন যেকোনো বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ থাকা ও তা নিয়ে প্রশ্ন করে যাওয়া এক সাংবাদিকের স্বভাবসুলভ আচরণ।

কেমন করে করবেন সাংবাদিকতা:

সংবাদের সাথে সম্পর্কহীন শিরোনাম বা ছবি দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করবেন না। ভয়ংকর ছবি বা ফুটেজ প্রচার করবেন না। ভিকটিম ও লাশের ছবি প্রকাশ করবেন না। যৌনতা, সন্ত্রাস, সহিংসতা ও বীভৎসতার নগ্ন ছবি প্রকাশ করবেন না। ছবি-শব্দ সিলেকশনে সংবেদনশীল হন। প্রয়োজন হলে ছবি ব্লার বা ঝাপসা করে দিন। ছবিকৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন।

ভাষাজ্ঞান রাখুন। শুদ্ধ বানান রীতি মাথায় রেখে লিখুন। বাংলা শব্দ, বাক্য ও বানানের উপস্থাপনায় সচেতনতার পরিচয় দিন। খারাপ ভাষা পরিহার করুন।

সংবাদকে প্রাসঙ্গিক করতে গায়েবি সোর্স ব্যবহার করবেন না। তথ্যের উৎসমূল অনুসন্ধান করুন, নির্ভরযোগ্য সূত্র শনাক্ত করুন এবং তথ্য-উপাত্ত যাচাই করুন। রুচিবোধ মাথায় রেখে তথ্যনির্ভর সংবাদ পরিবেশন করুন। ফ্যাক্ট অনুসন্ধান করুন, তদন্তমূলক সাংবাদিকতা করুন। সূত্রহীন সংবাদ ও ভুল তথ্য প্রচার করবেন না।

পেশাদারিভাবে ঘটনার বিবরণ সংগ্রহ করুন। দায়সারাভাবে সংবাদ উপস্থাপন করবেন না। সামাজিক মূল্যবোধ নষ্ট হয় এমন তথ্য প্রকাশে সতর্ক হোন। খবরের কুরুচিপূর্ণ (রগরগে কাহিনী কিংবা সুড়সুড়ি সৃষ্টির প্রতিবেদন) প্রকাশ করবেন না।

কী লিখবো- কতোটুকু লিখবো- কাকে কী প্রশ্ন করবো- কখন করবো অথবা কাউকে কোনো ফেবার করা হচ্ছে কিনা- কাউকে কোনোভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে কিনা- কারও ব্যক্তিস্বার্থে গণস্বার্থকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে কিনা। মাথায় রেখে সংবাদ লিখুন।

জনগণকে আকর্ষণ করে অথচ জনস্বার্থ পরিপন্থী সংবাদ উপস্থাপন করা যাবে না। পত্রিকা কাটতির স্বার্থে মুখরোচক কাহিনীর মাধ্যমে রুচিহীন ও অশালীন সংবাদ পরিবেশন করা যাবে না।

কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের মুখপত্র হবেন না। রাজনৈতিক দর্শন ও প্রলোভনে হাত মেলাবেন না। সরকারি এজেন্ডায় সিন্ডিকেটেড হয়ে একই সুরে সংবাদ প্রকাশ করবেন না। আপসহীন সাংবাদিকতায় ব্রত হোন।

পাঠককে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে কোনো ঘটনাকে বিকৃত করবেন না। কারও উদ্ধৃতি বিকৃত করে ব্যবহার করবেন না। সাংবাদিকতার প্রথম দায়বদ্ধতা সত্যের কাছে। সাংবাদিকতার প্রথম আনুগত্য নাগরিকজনের প্রতি। সাংবাদিকতার সারকথা হচ্ছে সুশৃঙ্খল যাচাই।

সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয় কোনো মাধ্যমেই বদলায় না। সংবাদে ভারসাম্য, বস্তুনিষ্ঠতা, সত্যতা-এই তিনটির উপস্থিতি রাখুন। নিরপেক্ষতা, স্পষ্টতা, প্রাঞ্জলতা সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয়। পাঠকের কাছে তার প্রাপ্য তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন সাংবাদিকতার লক্ষ্য।

বায়াস- বুলশিট- লাই। বায়াস: পক্ষপাত, একপেশে। বুলশিট: বাজে, আবোল-তাবোল কথাবার্তা। লাই: মিথ্যা, অসত্য। এসব এড়িয়ে চলুন। সংবাদে ভারসাম্য (পক্ষপাতহীনতা) এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন।

মিডিয়া এথিক্স মেনে চলুন। ফেক নিউজ প্রপঞ্চ পরিহার করুন। প্রপাগান্ডা ও উসকানি দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করবেন না। একটা সংবাদমাধ্যমের জন্য প্রধান তিনটি মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে- পেশাদারিত্ব, বিশ্বাসযোগ্যতা ও জবাবদিহিতা।

কুম্ভিলকবৃত্তি (কাট-কপি-পেস্ট) পরিহার করুন। অনুসন্ধিৎসু মনোভাব নিয়ে সুস্পষ্ট উপস্থাপন করুন। উপস্থাপনে ভিন্নতা আনুন। নিত্য নতুন কলাকৌশল আয়ত্ত করুন। পাঠক ও দর্শকের পালস বুঝুন। মানুষের ভেতরকার মনোভাব বুঝার চেষ্টা করুন।

লিখেছেন রায়হান রাজীব

কেমন হবে মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টাল:

মাল্টিমিডিয়া হলো বহমুখী মাধ্যমের সুসমন্বয় ও কার্যকরী ব্যবহার। টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও, অ্যানিমেশন, হাইপার লিংক, পপআপ, ইন্টারেক্টিভ অপশন হলো এক একটি মিডিয়াম। এই সব সুবিধাই থাকতে হবে নিউজপোর্টালে। আধুনিক নিউজপোর্টালকে হতে হবে বহু কাজের কাজী। হতে হবে মাল্টিটাস্কার ও মাল্টিসার্ভিসেস পোর্টাল।

অনলাইন সাংবাদিকতা চতুর্মাত্রিক। অনলাইন সংবাদপত্রে মোটামুটি চারটি মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয় (লেখা- ছবি- অডিও- ভিডিও)। এ ছাড়া এ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারেরও সুযোগ আছে। এ কারণে অনলাইন সংবাদপত্র সবচেয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদটিই প্রকাশ করতে পারে। অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে এটা সচরাচর সম্ভব নয়। রোবট জার্নালিজম ও ড্রোন জার্নালিজমও এখন অনলাইন জার্নালিজমের একটি অংশ হয়ে গেছে।

আমাদের দেশে রয়েছে মিশ্র নিউজ পোর্টাল, বিশেষায়িত নিউজপোর্টাল, বিশেষ সংবাদ ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল, ডেইলি ইভেন্ট নিউজ পোর্টালসহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন সংবাদপত্র।

অনলাইন সাংবাদিকতা একটি ইন্টার অ্যাকটিভ প্রক্রিয়া। পাঠক সংবাদের বিষয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে একজন সাংবাদিক নিজেই ভিডিও এডিটিং ও সম্পাদনার কাজও করেন। তাই বলা যায়, সাংবাদিক বলতে শুধু তথ্য সংগ্রহকারক হবেন এই ধারণার দিন শেষ।

তবে এটাও ঠিক, অপরিপক্ক দু-চারজন সাংবাদিক দিয়ে একটি অনলাইন গণমাধ্যম চালানো সম্ভব নয়। যদি জোর করে চালানোর চেষ্টা করা হয়, তবে অন্য প্রতিষ্ঠানের সংবাদ চুরি করা ছাড়া উপায় থাকে না। আর চুরি করা সংবাদ দিয়ে পাঠকের আস্থা অর্জন সম্ভব নয়।

অনলাইন সাংবাদিকতা হচ্ছে অতি তাড়াতাড়ির সাহিত্য। এখানে প্রতিটি সেকেন্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবার আগে সব খবর, এখানকার মূল সূত্র-কথা। করতে হয় নানা ফরম্যাটের পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

কোথায় যাচ্ছে সংবাদদুনিয়া:

অনলাইন মিডিয়াই সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ! তা বুঝতে রকেট সায়েন্স পড়া লাগে না। তীব্র গতিশীল জীবন-যাপনে এখন কারও সেই সময় নেই যে এক হাজার ওয়ার্ডের একটি লেখা বসে বসে পড়বে। সেই জায়গাটি দখল করেছিল স্থিরচিত্র। তাকে হটিয়েও জায়গা করে নিচ্ছে ভিডিও। দুই মিনিটের ভিডিওতে যদি পাঠক এক হাজার ওয়ার্ডের আদ্যপান্ত নিউজ পেয়ে যায় তাহলে সে আধ ঘণ্টা সময় ব্যয় করবে কেন!

লেখা সংবাদের থেকে মানুষ দেখতে বেশি পছন্দ করছে। আর এ কারণেই বদলে যাচ্ছে প্রিন্ট পত্রিকা ও সংবাদ ওয়েবসাইটগুলো।

গতিময় নাগরিক জীবনে তাই এখন জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল। সংবাদবিজ্ঞানীরা বলেন, সামনের দিনে একজন সাংবাদিককে দৃশ্য-শ্রাব্য-কথ্য-লেখ্য চার মাধ্যমেই সচল থাকতে হবে। যার নাম বহুমাধ্যম সাংবাদিকতা বা মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম।

প্রিন্ট পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতা থেকে শুরু করে বেশ কিছু পাতায় এখন নিয়মিত দেখা যাচ্ছে কিউআর কোড, যেখানে লিখিত সংবাদটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি ভিডিও তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে পাঠকদের জন্য। ওয়েবসাইটগুলোতে যেখানে শুধু ফটোগ্যালারি ছিল, সেই স্থানটি দখল করে নিয়েছে ভিডিও গ্যালারি।

অনলাইন সংবাদে যেখানে বেশি বেশি ছবি ব্যবহার করে উপস্থাপন করা হতো, তার বদলে বর্তমানে ভিডিও ও সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এমবেড করে সাজানো হচ্ছে সংবাদ। পাঠকের সঙ্গে আরও বেশি মিথষ্ক্রিয়ায় এগিয়ে চলছে মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল।

বদলে যাচ্ছে আগামীর সাংবাদিকতা:

দিন যতই যাচ্ছে ততই পরিবর্তিত হচ্ছে সাংবাদিকতার ধরন। যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ধারা। একুশ শতকের শুরুতে এই দেশে মিডিয়ার বিপ্লব ঘটেছে। মিডিয়া বিপ্লবের শুরুতে সাংবাদিকতা ছিল কেবল টেলিভিশন আর পত্রিকাকেন্দ্রিক। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেরকমটি আর নেই। যোগাযোগমাধ্যমে যোগ হয়েছে অনেক নতুনত্ব। যাকে বলা হয় নিউ-মিডিয়া।

বর্তমান সময়ে মোবাইল জার্নালিজম (মোজো) অনেকটা বিকশিত হচ্ছে। মোবাইল জার্নালিজম অনেক বেশি দর্শক টানছে। সব ধরনের মিডিয়া হাউজ নজর দিচ্ছে মোবাইল জার্নালিজমের ওপর।

বর্তমানে একজন সাংবাদিককে একই সঙ্গে ভালো প্রতিবেদক, ভালো সহ-সম্পাদক, ভালো ফটোগ্রাফার, ভালো ভিডিওগ্রাফার এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভিডিও এডিটরের কাজ করতে হচ্ছে। এককথায় বললে ওয়ান ম্যান আর্মির মতো ওয়ান ম্যান জার্নালিস্ট।

আগে যেখানে ক্যামেরাম্যান, ফটোগ্রাফার আলাদাভাবে কাজ করত, সেখানে একজন রিপোর্টারই সব কিছু পারছে। একাই তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে, সংবাদ সম্পাদনা পর্যন্ত করছে। এটি সাংবাদিকতার পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

তবে এমন সাংবাদিকদের এখনও বুলিংয়ের শিকার হতে হয় মূলধারার সাংবাদিকদের কাছে। এমন সাংবাদিকদের পরিচয় হিসেবে বলা হয় মোজো (মোবাইল জার্নালিস্ট), মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার বা অনলাইন রিপোর্টার।

সময়ের সাথে দৌড়াচ্ছে মানুষ। কম সময়ে যে বেশি তথ্য দিতে পারছে সে এগিয়ে থাকছে। তবে নতুন কিছু জানাতে গিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছেন সাংবাদিকদের কেউ কেউ। যে যেখানে পারছেন সেখান থেকেই লাইভ দেখানোর প্রতিযোগিতা করছেন।

একটি ক্ষেত্রে তাদের দক্ষ হয়ে ওঠা আরও জরুরি। তা হলো প্রতিবেদন তৈরি। লাইভে কথা বলতে গেলেও গুছিয়ে বলার জন্য ভালো সংবাদ লেখার অভিজ্ঞতা বেশ কাজে লাগে।

সময়ের সঙ্গে সাংবাদিকতার পরিবর্তন আমাদের মেনে নিতে হবে। যারা আগামী নিয়ে ভাববেন না তারা সাংবাদিকতার উৎকর্ষতা থেকে বঞ্চিত হবেন।

সাংবাদিকতার বিষফোঁড়া কারা:

নিউজ ওয়াজ এক্সপেন্সিভ। বলা হয়, নিউজ এজেন্সি অনাথ শিশু লালন পালনের কোন চ্যারিটি হাউজ নয়। আর ৮-১০টি ব্যবসার মতোই গণমাধ্যম একটি ব্যবসা। এটি কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়, যা আজীবন ভর্তুকি দিয়ে চলবে। 

কর্পোরেট হাউজ আর কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বাণিজ্যে এই ইন্ডাস্ট্রির গাড়ির চাকা ঘোরে। মালিকগণের বিশ্বাস, মতাদর্শ এবং স্ট্রেটিজি অনুযায়ী তৈরি হয় সংবাদ। যেহেতু মালিকের বেতনের টাকায় সাংবাদিকরা বাঁচেন, তাই অনেক ক্ষেত্রে মালিক যেমন চান সাংবাদিক তেমন লেখেন।

তবে জনমানুষের স্বার্থের অনুকূলে অবস্থান না নিয়ে ব্যবসায়িক গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে অনলাইন-অফলাইন মিডিয়া হাউস খুলে রেখেছেন। কর্পোরেট পুঁজির দাসত্ব সংবাদ মাধ্যমের জন্য অনেক বড় বিপদ।

 

বলে রাখা ভালো, এবিষয়ে আমি কোনও এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞ নই। পেশার খাতিরে নিরন্তর জানার চেষ্টা করছি মাত্র। লেখার প্রয়োজনে বিভিন্ন বই, পত্রিকা ও ব্লগ পড়েছি। এসব সেসবেরই যোগফল বা একত্রীকরণ।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top