পিরু শেখের স্ত্রী বললেন, আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই

বাবা-ছেলে হত্যায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৭ জনের যাবজ্জীবন

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:০৫

দণ্ডপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলাম

খুলনার তেরখাদা উপজেলার পিরু শেখ ও তার ছেলে নাইম শেখ হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৭ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জ‌রিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জরুল ইসলাম হাওলাদার এই রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসা‌মিরা কাঠগড়ায় উপ‌স্থিত ছিলেন। মামলা থেকে দুই আসা‌মিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো—তেরোখাদা উপজেলার ছাগলাদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলাম (৫৪), আব্দুর রহমান (৫৫), জমির শেখ (২৫), শেখ সাইফুল ইসলাম (৩৫), খালিদ শেখ (৩২), এস্কেন্দার শেখ (৪২), জসিম শেখ (৩৫), হোসেন শেখ (৩০), জিয়ারুল শেখ (২৬), বাহারুল শেখ (২৪), আব্বাস শেখ (২৪), অহিদুল গাজী (৩৪), খাইরুল শেখ (৩৫), কেরামত মল্লিক (৩৫), মাহবুর শেখ (৪৯), বাবু শেখ (৩৫) ও নুর ইসলাম শেখ (৩৭)। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন আবু সাঈদ বিশ্বাস (৩৫) ও আয়েব শেখ (৫০)।

২০১৯ সালের ৬ আগস্ট তেরখাদা উপজেলার পহরডাঙ্গা গ্রামের পিরু শেখ ও তার পরিবারের লোকজন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ২টার দিকে মামলার আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সিঁধ কেটে ঘরে ঢোকে। অন্যরা ঘরের দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়।

তাদের দেখে ফেললে চাপাতি দিয়ে পিরুর মাথায় আঘাত করে একজন। এতে তা মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে যায়। পরে আসামিরা পিরুকে এলোপাতাড়িভাবে কোপাতে থাকে। ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রীর চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে ছেলে নাইম এগিয়ে আসেন। এ সময় তাকে টেনে-হেঁচড়ে আসামিরা উঠানে নিয়ে যায় এবং অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

আসামিরা চলে যাওয়ার পর পিরু শেখকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এ ঘটনার দুই দিন পর পিরুর স্ত্রী মাহফুজার বেগম বাদী হয়ে তেরখাদা থানায় স্বামী ও সন্তান হত্যার অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই মুক্ত রায় চৌধুরী ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি ৩ নম্বর ছাগলাদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ১৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে পিরু শেখের স্ত্রী মাহফুজা বেগম বলেন, ওই‌দিন রাতে আমার স্বামী ও সন্তান আসা‌মিদের কা‌ছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আকুতি জা‌নিয়ে‌ছিল। কিন্তু তাদের মন গলে‌নি। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদা‌লতে আ‌পিল করবো।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ তৌফিকুল্লাহ বলেন, রায়ে আসামিপক্ষ সঠিক বিচার পায়নি। তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

 

অন্যদিকে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আহাদুজ্জামান। তিনি বলেন, এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সঠিক বিচার পেয়েছে। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে চলে আসা শত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড বলেও জানান তিনি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top