আবেগ, শূন্যতা ও ভালোবাসায় জড়ানো নাম শেখ রাসেল
শেখ রাসেল নির্মলতার প্রতীক, দুরন্ত প্রাণবন্ত ও নির্ভীক
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৩০
বেঁচে থাকলে ৫৮ পেরিয়ে ৫৯ বছরে পা দিতেন তিনি! পুরোদস্তর মধ্য বয়স্ক এক পুরুষের দীপ্তিতে উদ্ভাসিত হতেন। আচ্ছা, দেখতে কেমন হতেন তিনি? সেই গোঁফওয়ালা ভরাট কণ্ঠের রাশভারি চেহারা নাকি আরেকটু ভিন্ন কোন অবয়ব! তা যাই হোক, আদল দেখলে নিশ্চিত বোঝা যেত, এ আর কেউ নন, জাতির পিতারই ছায়া!
বলছি, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের কথা। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্ম শেখ রাসেলের। অনেক সম্ভাবনার স্বপ্নিল দোলা দিয়ে তিনি চলে গেছেন জীবনের শুরুর দিনগুলোতেই। মৃত্যুকালে শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল।
বাঙালির কাছে শেখ রাসেল অন্তহীন বেদনার এক মহাকাব্য, চেতনার গভীরে চিরস্থায়ী এক তাজা ক্ষতের নাম। অধিকারবঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক । শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে ভালোবাসার নাম।
ছোট্ট রাসেল ছিলেন খুব কোমল মনের অধিকারী। নিজে কবুতরকে খাওয়াতে পছন্দ করতেন। তবে বাসায় কবুতরের মাংস রান্না হলে কখনই খেতেন না। ছোট্ট বয়সে এমন কোমলতা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
রাসেল নামটি শুনলেই প্রথমে যে ছবিটি সামনে আসে, তা হলো, হাস্যোজ্জ্বল এক ছোট্ট শিশুর দুরন্তপণা। মাথাভর্তি অগোছালো চুলের সুন্দর একটি মুখাবয়ব।
রাসেল সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, চলাফেরায় রাসেল বেশ সাবধানী কিন্তু সাহসী ছিল, সহসা কোনও কিছুতে ভয় পেতো না। কালো কালো বড় বড় পিঁপড়া দেখলে ধরতে যেত। কামড় খাওয়ার পর থেকেই কালো বড় পিঁপড়া দেখলে বলতো ‘ভুট্টো’।
যখনই ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সেই কালোরাতের কথা মনে হয়, নিষ্পাপ শিশু রাসেলের মুখটিই প্রথমে ভেসে আসে রক্তরঞ্জিত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে।
প্রত্যক্ষদর্শী বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী এএফএম মহিতুল ইসলামের মতে, ১১ বছরের শিশু রাসেল প্রতিদিনের মতো সেদিনও ঘুমিয়েছিল। আকস্মিক গুলির শব্দে ঘুমভাঙা চোখে সে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। অবস্থা বুঝে পেছনের ফটক দিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় ঘাতকরা রাসেলকে আটক করে। এ সময় মুহুর্মুহু বুলেটের শব্দ আর আর্তচিৎকার শুনে শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঘাতকদের বলেছিল, ‘আমি মায়ের কাছে যাব।’ পরে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে জোর মিনতি করে বলেছিল, ‘আমাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দাও।’ ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুর আকুতিও নরপশুদের মন গলাতে পারেনি। মাত্র ১০ বছর ৯ মাস ২৭ দিন বয়সে এই প্রতিভাবান শিশুর জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। বঙ্গবন্ধুর ঘাতক, আত্মস্বীকৃত খুনিরা সেদিন জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- তাদের সেই অপচেষ্টা শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
রাসেল আজ বেঁচে থাকলে, হয়তো দাপিয়ে বেড়াতেন রাজনীতির মাঠ। পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পাশে থাকতেন শেখ হাসিনার। তবে নরপিশাচরা সেটি চায়নি।
‘আমি মায়ের কাছে যাব’ শুনে নিষ্ঠুর হত্যাকারীদের যদি একটু মায়া হত; তাহলে হয়তো বেঁচে যেত মায়াবি কিশোর, ক্ষত-বিক্ষত হতো না রাসেলের মতো এক দুরন্ত কিশোরের মুখচ্ছবি। আজ সেই ছোট্ট রাসেল এখন শুধুই ইতিহাস আর স্মৃতি। যে স্মৃতি বাঙালীকে বয়ে বেড়াতে হবে যুগের পর যুগ।
জন্মদিনে শেখ রাসেলকে স্মরণ করি গভীর আবেগ, শূন্যতা ও ভালোবাসায়। আর প্রতিজ্ঞবদ্ধ হয়ে উচ্চারণ করি, বাংলাদেশ হোক সকল শিশুর জন্য নিরাপদ আবাসস্থল।
বিষয়: শেখ রাসেল
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।