বিএনপিতে নাজমুল হুদা ও তৈমূর আলম খন্দকার লাঞ্ছিত হয়েছেন

তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মোবিন, মহাসচিব তৈমুর আলম! নতুন দলে কী করবেন তারা?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৭

ছবি: সংগৃহীত

শমশের মবিন চৌধুরীকে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন ও অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে মহাসচিব করে ২৭ সদস্যের আংশিক কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া দলটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মেয়ে অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা দলের নির্বাহী চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে, বেলা ১২টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হয় দলটির কাউন্সিল। সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা। এ সময় তিনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সাবেক দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারকে তৃণমূল বিএনপিতে স্বাগত জানান।

শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারের উদ্দেশে স্বাগত ভাষণে অন্তুরা হুদা বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে উনাদের স্বাগত জানাই। উনাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও অভিভাবকত্বে আমার বিশ্বাস আমাদের দল আরও শক্তিশালী ও গতিশীল হবে।

দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি ও বিভিন্ন দুর্নীতির বিস্তারে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ইদানীং জনজীবন বিপন্ন এবং অনেক বিষয় সরকার ব্যর্থ হয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সাধারণ মানুষ ও নিম্ন আয়ের জনগণের প্রতি সমবেদনা ছাড়া আমাদের আর কোনো গতি নেই।

শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও। অবসরের পর ২০০৮ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। এর পরের বছরই দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মনোনিত হন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে তিনি হঠাৎ করেই বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে আসেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে যোগ দেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সাথে। তিনি এখনও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেব দায়িত্ব পালন করছেন।

তৈমুর আলম খন্দকার দীর্ঘসময় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও হন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটির প্রথম নির্বাচনের তিনি বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। ২০২২ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়।

সম্মেলনে দলটির চেয়ারপরসন শমসের মোবিন চৌধুরী জানান, তৃণমূল শব্দটি পছন্দ হওয়ায় তিনি দলটির সাথে যুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, তৃণমূল বিএনপি কিংস পার্টি নয়, এটা পিপলস পার্টি। তৃণমূল বিএনপি কোন সহিংসতা মূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।

শমসের মোবিন বলেন, যারা প্রকৃত গণতন্ত্র দেখতে চায়, যারা আইনের শাসন দেখতে চায় তারাই তৃণমূল বিএনপি করবে। রাষ্ট্রকাঠামোর মেরামতে কিছু সুপারিশ করবে তৃণমূল বিএনপি। অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় তৃণমূল বিএনপি, সে ক্ষেত্রে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। 

এদিকে, মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সাথে জেল খেটেছি, তাঁর সাথে ঐকবদ্ধ হয়ে আছি। আজকের বিরোধী দল যারা তত্ত্বাবধায়ক চান। সেই কেয়ারটেকার গভমেন্টের জনক নাজমুল হুদা। তিনি নাই, দাবি রয়ে গেছে। সকলেই কেয়ারটেকার চাই। যখন তিনি তত্ত্ব দেন, তখন সরকারি গাড়ি ত্যাগ করে নিজের গাড়িতে বাড়ি যান। 

বিএনপির সাবেক নেতা তৈমুর বলেন, দলকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাহায্য চাই। লুটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। এমপিরা নিজের এলাকায় নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছেন। যানবাহন চালকরা তাদের ট্যাক্স দেয়। সরকারি দলের স্থানীয় এমপি বা প্রতিনিধি তাদের স্বজনরা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। এটা ব্যবস্থা নিতে হবে। দলে দুর্নীতিবাজদের জায়গা হবে না। তৃণমূল বিএনপি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হবে না। সবার মত নিয়ে চালানো হবে দল। জোট করে সুস্থধারার রাজনীতি করতে হবে, ব্যারিস্টার হুদার দেখানো পথে।

তৈমুর আলম বলেন, আমি একটি দল থেকে এসেছি। খালেদা জিয়ার জন্য সুস্থ জীবন ও কারামুক্তি কামনা করি। বিএনপি আমাকে বহিস্কার করেছে। অপেক্ষা করেছি, শোকজ করেনি। দেড় বছর এভাবে ছিলাম। কাজ করেছি, কিছু হয়নি। হুদা সাহেবের দলে আসছি, কারণ তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, এই দলেরও তাই। বিএনপির সাথে তৃণমূল বিএনপির আদর্শগত মিল আছে।

তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০১২ সালে তিনি বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিএনএফ নামে নতুন একটি দল গঠন করেন। সেখান থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর, ২০১৫ সালে গঠন করেন তৃণমূল বিএনপি। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত এই দলের প্রতীক সোনালি আঁশ। ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দলটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। এর তিনদিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি মারা যান নাজমুল হুদা। তার মৃত্যুর পর ১৬ মে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তার মেয়ে ব্যারিস্টার অন্তরা হুদা। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ টি সংসদীয় আসনের সবগুলোতেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top