জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায় আপিলেও বহাল
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৪৫
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল (লিভ টু আপিল) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল থাকছে। রবিবার (১৯ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই রায় দেন। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম।
জামায়াতকে দেয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ। রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একই সঙ্গে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন।
তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। ওই আপিল শুনানিতে উদ্যোগ নেন রিটকারী পক্ষ। সে অনুসারে আপিলটি চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার কার্যতালিকায় ওঠে।
এরপর ৩১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সার সংক্ষেপ প্রস্তুত করতে পক্ষদ্বয়কে চূড়ান্তভাবে দুই মাস সময় দেন।
আদেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, নিবন্ধন না থাকলেও সংবিধান অনুযায়ী জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে কোনো বাধা নেই। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রয়োজন নির্বাচন করার জন্য, রাজনীতি করার জন্য নয়। দেশে অনেক অনিবন্ধিত দল নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। ওই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। পরে জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ২০১৩ সালের ১ আগস্ট অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল বিভাগে আবেদন করে। ওই আবেদনটি চলতি বছর শুনানির উদ্যোগ নেয় রিটকারী পক্ষ।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে গত জুনে আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করেন তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজন। তানিয়া আমীর ও আহসানুল করিম জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার বিষয়ে শুনানি করতে চান। এ সময় আদালত বলেন, এটি হাইকোর্টের রায়। আপনারা আদালত অবমাননার বিষয়ে প্রপার বেঞ্চে যেতে পারেন।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।