কঠোর নিরাপত্তা জোরদার

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ফের উৎকণ্ঠা, ব্যাহত হচ্ছে জীবনযাত্রা

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৯:৫১

ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে আবারও ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘাত-সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় সেখানকার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

সীমান্ত থেকে প্রতিনিয়ত শোনা যাচ্ছে গুলির শব্দ। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন ঘুমধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও দৌছড়ি- এই ৩ ইউনিয়নের বাসিন্দারা। পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ানক হয়ে উঠছে, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সীমান্তের ওপারে প্রবল গোলাবর্ষণের কারণে ঘুমধুমের তুমব্রু এলাকা থমথমে হয়ে পড়েছে। ভয়ে, আতঙ্কে স্থানীয়রা কেউ ঘরের বাইরে বেরোচ্ছেন না।

এই সংঘাত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ হলেও কখনও কখনও সেখান থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টার শেল নাইক্ষ্যংছড়িতে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ও ধানী জমিতে এসে পড়েছে। সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা জুড়ে হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে। যার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রবল হচ্ছে। বাড়ি থেকে কেউ বাইরে বের হতে পারছেন না।

গতকাল বুধবার দুপুরে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্তে শান্তি রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী সজাগ রয়েছে। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে বিপদজনক এলাকায় বসবাসকারীদের প্রয়োজনে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে। আতঙ্কিত হবেন না, সজাগ থাকুন।’

এ সময় এসএসসি পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র। পরিস্থিতি খারাপ হলে অবস্থা বুঝে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেন, ‘সীমান্তে গত কয়েকদিন ধরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। পুলিশি (নিরাপত্তা) ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে ও জোরদার করা হয়েছে। ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় মর্টার শেলের শব্দ শোনা গেছে। এলাকার লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আইন-শৃঙ্খলা (পরিস্থিতি) স্বাভাবিক আছে। জনগণকে নিরাপদ রাখার সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে থেমে থেমে সশস্ত্র যুদ্ধ চলছে। তাদের এই প্রত্যক্ষ যুদ্ধে গুলির শব্দ ও বিভিন্ন সময় ছুড়ে দেওয়া গোলা ও মর্টার শেল নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী লোকালয়ে এসে পড়ছে। এতে প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা।

সর্বশেষ গত দুইদিন কোনার পাড়া এলাকায় বিস্ফোরিত মর্টার শেলের খোসা ও একই এলাকায় মিয়ানমার থেকে নিক্ষিপ্ত অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। এই নিয়ে স্থানীয়দের জনমনে চরম আতঙ্ক তৈরি হলেও হতাহতের খবর আসেনি।

মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একের পর এক গোলা এসে পড়ায় চরম বিপাকে রয়েছেন কৃষকরা। আতঙ্কে, আশঙ্কায় চাষাবাদ করতে পারছেন না তারা। সেই সঙ্গে ভাটা পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

৩৪ বিজিবির অধিনায়ক জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আছে বিজিবি। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একজন রোহিঙ্গাকেও (আর) প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আমরা সবসময় সজাগ আছি।’

নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলি হচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।’

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top