প্রেসক্লাবে জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন, মন্তব্য জানতে চায় আ.লীগ
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৫৭
জাতীয় প্রেসক্লাবে পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর মধ্যে সেই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে মন্তব্য চেয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে মন্তব্য চেয়েছে। দলটি লিখেছে, বাংলাদেশে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন, তাও জাতীয় প্রেসক্লাবে! আপনার মন্তব্য কি?
এই পোস্টের কমেন্টে একজন লিখেন, ওরা কবে যেনো বলেই বসে, আমরা সবাই ভাই ভাই স্বাধীনতার দরকার নাই। অপর এক মন্তব্যকারী লিখেন, সদ্য অর্জিত স্বাধীনতা উপভোগ করছেন ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষাধিক বীরাঙ্গনাদের ত্যাগ অস্বীকার করার স্পর্ধা দেখিয়ে! এছাড়াও পোস্টের কমেন্টবক্সে অসংখ্য নেটিজেনকে প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাতে দেখা যায়। পোস্টটিতে মাত্র দুই ঘন্টায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কমেন্ট পড়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেনে মানিক মিয়া হলে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনারের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। তবে হাইকমিশনের কাউন্সেলর কামরান ধাঙ্গাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। একাডেমির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আব্দুল জাব্বার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মো. সামসুদ্দিন বলেন, ৫ আগস্ট আমাদের বিজয় দিবস, এটিই আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এসময় তিনি জিন্নাহকে স্মরণ করে বলেন, ১৯৪৭ সালে যদি বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে না থাকতো তবে আজ কাশ্মীরের মতো ঘাড় ফেরানোর উপায় ছিল না, ভারতীয় জান্তারা ঘাড়ের ওপর অস্ত্র ধরে রাখতো। জিন্নাহ পাকিস্তানের সঙ্গ নিয়েছে বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
অপর বক্তা নজরুল ইসলাম বলেন, যেকোনভাবেই হোক আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমাদের পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ না থাকলে পাকিস্তান সৃষ্টি হতো না, আর পাকিস্তান না থাকলে বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না।
ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের বাইরে বাংলাদেশে পাকিস্তানের জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকী পালনের ঘটনা এটিই প্রথম। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তার প্রবন্ধে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের নানা ঘটনা বর্ণনা করা হয়। অনুষ্ঠানে জাফরুল হক জাফর জিন্নাহকে নিয়ে একটি উর্দু কবিতা পাঠ করেন। পাকিস্তানি শিক্ষার্থী মো. তাহির ও কামরান আব্বাস জিন্নাহকে নিয়ে উর্দুতে গান পরিবেশন করেন।
এদিকে, নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমির ব্যানারে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন নিয়ে সমর্থন করেন না বলে ঢালিউডের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও ঢাকার নবাব খাজা নাইম মুরাদ এক ফেসবুক পোস্ট দেন। নাঈম ঢাকার নবাব পরিবার খাজা সলিমুল্লাহর বংশধর। তাই বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে ফেসবুকে জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের একটি ছবি পোস্ট করেন তিনি। ক্যাপশনে বড় করে নাঈম লেখেন, ঢাকার নবাব পরিবার এটা সাপোর্ট করে না।
‘আমি খাজা নাঈম মুরাদ নওয়াব সলিমুল্লাহর পৌপুত্র এবং গর্বিত বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আমি এমন কোনো গোষ্ঠী বা কার্যকলাপের সাথে যুক্ত নই যা আমাদের জাতীয় পরিচয় বা ইতিহাসকে ক্ষুণ্ণ করে।' নাঈম আরও লেখেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমি’র সাথে আমাদের ঢাকা নবাব পরিবারের কোনো সম্পর্ক নাই এবং এদের প্রচারিত মূল্যবোধের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান করি।
দেশের মহান মুক্তিযুদ্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নাঈম লেখেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা, ২০২৪ সালের ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের প্রতি যে কোনো কর্মকাণ্ড যা জনসাধারণের আশা এবং মূল্যবোধের বিরোধিতা করে আমি তা সমর্থন করি না। আমি বাংলাদেশের ছাত্র জনতার এবং তাদের স্বার্থের প্রতি দৃঢ়ভাবে অবস্থান করি।’
নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ বড় একটা ফ্যাক্ট। এই নাম দিয়ে অনেকে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের পরিবার এই সংগঠন সম্পর্কে স্পষ্ট জানেই না।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিনেতা আরও বলেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমির ব্যানারে যারা এটা করেছেন তারা কেবল তাদের স্বার্থ রক্ষায় করেছেন। আমাদের নবাব পরিবারের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা এটা প্রত্যাশা করি না। যারা করেছেন তারা অন্যায় করেছেন। আমি অনুরোধ করব, আমাদের নাম নিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করলে তা আমরা কঠোরভাবে প্রতিহত করব।’
প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিল ছিল ঢাকার নবাব পরিবারের পারিবারিক বাসস্থান। চিত্রনায়ক নাঈম এ নবাব পরিবারের বংশধর। দেশের চলচ্চিত্র ও অভিনয়ের প্রতি আলাদা টান ছিল তার। তাই নব্বই দশকে ঢালিউড সিনেমায় পা রাখেন তিনি।
বুধবার অনুষ্ঠানে আলোচনা সভার অনুষ্ঠানে উর্দু ভাষায় দেয়া এক ব্যক্তির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম এসকে আজিম। তিনি ঢাকার একটি বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা। তবে সময় সংবাদ তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি।
১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে ওই ব্যক্তি উর্দুতে যা বলেন, তার বাংলা অনেকটা এরকম, “১৫-১৬ বছর পর আমরা এখানে উর্দু ভাষায় কথা বলছি এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারছি। এ জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ধন্যবাদ। মিরপুর-মোহাম্মদপুরে আমাদের বাপ-দাদারা বসবাস করতেন, তারা পাকিস্তানের পক্ষে মারা গেছেন। ভারত থেকে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান হয়েছিল এই দেশ।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেব না থাকলে এশিয়া মহাদেশে মুসলিমদের জন্য কোনো দেশ থাকত না। তার জন্য আমরা পাকিস্তান পেয়েছি, যেখানে আমরা মুসলমানরা সম্মানের সাথে ধর্মপালন করতে পেরেছি। ১৯৭১ সালে ভারত যুদ্ধ করে আমাদের এ দেশকে দুভাগ করে দিয়েছে। পঞ্চাশ-ছাপ্পান্ন বছর ধরে আমাদের বাপ-দাদারা এই পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে গেছেন। এজন্য আজ আমাদের এখানে পাকিস্তানের সবাইকে দেখে আর এ অনুষ্ঠানে এসে খুব খুশি লাগছে। ইনশাআল্লাহ, আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।”
অনুষ্ঠানে নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মো. সামসুদ্দিন বলেন, “৫ আগস্ট আমাদের বিজয় দিবস, এটিই আমাদের স্বাধীনতা দিবস।” অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার কামরান ধাঙ্গাল বলেন, “মুসলিম লীগে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্ব ছিল অসাধারণ। সমগ্র ভারতে মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গণআন্দোলনের সূচনা ছিল এটি।”
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।