দ্য ডনের প্রতিবেদন
শেখ হাসিনা কেন এতো দ্রুত ক্ষমতা হারালেন?
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৩৯
বিশ্বব্যাপী বুদ্ধিজীবী মহল জানতে আগ্রহী যে- যাকে একসময় আয়রন লেডির তকমা দেওয়া হয়েছিল- সেই হাসিনা এত দ্রুত কেন তার ক্ষমতা হারালেন। ২০০৯ সাল থেকে হাসিনা বাংলাদেশকে স্বৈরাচারীর মতো শাসন করেছেন, সকল বিরোধীদলকে বেপরোয়াভাবে দমন করেছেন।
শেখ হাসিনা আমলে বহুদলীয় গণতন্ত্রের অবক্ষয় ও একদলীয় শাসন চাপানোর প্রচেষ্টা নিয়ে দেশে যে ব্যাপক উদ্বেগ ছিল- তার ক্ষমত্যাচ্যুতির পর সেটির অবসান হয়েছে। এটি অবশ্যই বাংলাদেশে জনগণের মুহূর্ত। অনেকেই এই পরিবর্তনকে বর্ণনা করতে 'মনসুন রেভ্যুলেশন' শব্দ ব্যবহার করছে।
তবে এই পরিবর্তন স্থায়ী হবে কিনা এবং শিগগিরই দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। হাসিনার দল আওয়ামী লীগ তাদের বিশাল আস্থার জায়গা হারিয়েছে। তবে ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রতিনিধিত্ব করে- এমন দোহাই দিয়ে তারা ফিরে আসার চেষ্টা চালাবে।
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনে দেশটিতে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। যদিও সেটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না এবং বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে বৈষম্য তীক্ষ্ণ হয়েছে। অন্যদিকে পররাষ্ট্র নীতিতে হাসিনা ভারতীয় আধিপত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করাকে বেছে নেন- যেটি মুক্তিপ্রেমী বাংলাদেশির জন্য ছিল শ্বাসরুদ্ধকর। বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব সঙ্কুচিত হয়েছে কিন্তু এটা স্পষ্ট যে ভারত তার প্রভাব রক্ষার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবে।
এখন ভারতের নেতাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তারা কীভাবে তাদের দেশে হাসিনার উপস্থিতির পরিস্থিতি সামলাবেন। যতদিন তিনি দিল্লিতে অবস্থান করবেন ততদিন ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
দেশ দুইটি ২০১৩ সালে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে অনেকেই হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৯০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলার বিচারের জন্য তাকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। তবে বাংলাদেশে যে পরিবর্তন এসেছে সেটি ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। দেশটির গবেষক ও মিডিয়া ব্যাখ্যা করছে যে এই পরিবর্তন বাংলাদেশকে মুসলিম মৌলবাদের দিকে ধাবিত করবে।
এদিকে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকার রাজনৈতিকভাবে উত্তেজক পরিবেশ মোকাবেলা করতে ও অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে সংগ্রাম করছে। সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভের কারণে দেশের গার্মেন্টস সেক্টরের একটি অংশ ধুঁকছে। তবে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে।
ছাত্র নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে দেশটির বিচার বিভাগ, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে মৌলিক সংস্কার চায়। তাই মনে হচ্ছে নির্বাচন 'কিছু সময়ের' জন্য পেছাতে পারে। এ ছাড়া ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে চান। সেইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্য বানাতে চান।
বাংলাদেশের এই পরিবর্তনে পাকিস্তানের কেমন প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিৎ? পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের জনগণের অভিমতকে গ্রাহ্য করে। বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারকে তারা যেভাবে চান তা সম্পূর্ণভাবে সম্মান করা উচিত। হাসিনার পতন বাংলাদেশ-পাকিস্তানের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সুযোগ দিয়েছে।
পাকিস্তানের দ্য ডন পত্রিকায় এই নিবন্ধটি লিখেছেন আইজাজ আহমদ চৌধুরী। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং ইসলামাবাদের সানোবার ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।