বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৫৭

বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা

বাংলাদেশে বিভিন্ন গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিশন। দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের কার্যক্রম এবং আটক ব্যক্তিদের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ‘বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা জনসমক্ষে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

সাবেক বিচারপতি মাইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন সম্প্রতি ‘সত্য উদঘাটন’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে।

কমিশন জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে এ বিষয়ে একটি জোরালো ইঙ্গিত রয়েছে যে কিছু বন্দী এখনও ভারতের জেলে থাকতে পারে।

কমিশন জানায়, আমরা পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছি যেন তারা ভারতে এখনো বন্দি অবস্থায় থাকাতে পরে এমন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিককে খুঁজে বের করতে সাধ্যমত চেষ্টা করে । বাংলাদেশের সীমানার বাইরে এই বিষয়টি তদন্ত করা কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ।

প্রতিবেদনে সুখরঞ্জন বালি ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে গুমের পর ভারতে স্থানান্তরের ঘটনা কথা তুলে ধরা হয়েছে। সুখরঞ্জন বালিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে এবং সালাহউদ্দিন আহমেদকে ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দুজনকেই পরে ভারতের কারাগারে পাওয়া যায়।

এছাড়া বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হাম্মাম কাদের চৌধুরী তার বন্দিশালায় হিন্দি ভাষাভাষী লোকদের কথা শোনার কথা কমিশনকে জানিয়েছেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, তাকে যে নির্জন জায়গায় রাখা হয়েছিল, সেখানে টিএফআই (টাস্ক ফোর্স অব ইন্টারোগেশন) লেখা কম্বল ছিল, সেই সময়ে র্যাব সদর দপ্তরের তত্ত্বাবধানে টিএফআই পরিচালিত হতো। এই টিএফআই সেন্টার উত্তরায় র‌্যাব-১ এর সদর দপ্তরে প্রাচীর ঘেরা কম্পাউন্ডের ভেতর অবস্থিত ছিল।

কমিশন বলছে, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের এ ঘটনা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে হওয়া এ চর্চার একটি উদাহরণ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোনো বন্দীকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সময় বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা 'জম টুপি' (পুরো মাথা ঢেকে যায় এমন টুপি) পড়ে নিতেন। যাতে ভারতের অভ্যন্তরে তাদের চেহারা দেখতে না পায় তাদের পরিচয় প্রকাশ না পায় বা কেউ তাদের চেহারা । এ থেকে বোঝা যায় যে ভারত ও বাংলাদেশের সরকার এবং তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয় ছিল।

র‌্যাব ইন্টেলিজেন্সে যুক্ত একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে দুই দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময়ের এ অনুশীলন ও তাদের পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া গেছে।

এক সদস্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে র‌্যাব ইন্টিলিজেন্স ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে তিন বন্দীকে গ্রহণ করেছিল।

এতে বলা হয়, 'এদের মধ্যে দুই বন্দীকে গ্রহণের পর রাস্তার পাশে হত্যা করা হয়েছিল। আরেকজনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্য একটি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।'

ওই সময় র‌্যাব ইন্টিলিজেন্সও দুই বন্দীকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল।

এসব ঘটনায় ভারতের জড়িত থাকার পরিমাণ ও উভয় দেশের জন্য এর প্রভাব সম্পূর্ণভাবে বোঝার জন্য বিষয়গুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৭ আগস্ট গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে।

কমিশনে এ পর্যন্ত এক হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। দেশে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top