জাতীয় ঐকমত্যেই চূড়ান্ত হবে জুলাই সনদ-নির্বাচনের তারিখ
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৭:২১
জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে ছয় সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবিত সুপারিশ থেকে প্রয়োজনীয় সংস্কার চূড়ান্ত হবে। আর সংস্কার চূড়ান্ত করার পর সবাই জুলাই চার্টার (সনদ) স্বাক্ষর করবে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার বাইরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি সংস্কার কমিশন প্রধানকে নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছেন। এ কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রিয়াজ। অন্যান্য পাঁচ কমিশন প্রধানরা এর সদস্য।
শফিকুল আলম বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা করবে। এতে ঠিক করা হবে কোন সংস্কার এখনই করা সম্ভব, কোনগুলো পরবর্তীতে বাস্তবায়ন হবে। কোন পরিবর্তনের জন্য সাংবিধানিক সংশোধন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের স্বাক্ষরের মাধ্যমে জুলাই চার্টার গৃহীত হবে। এতে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সংস্কার বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী সরকার। এ বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করবে আগামী নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরে হবে নাকি আগামী বছরের জুনের মধ্যে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম বিচার বিভাগ সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে তিনি বলেন, আগের সরকারগুলো বারবার বলেছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু কার্যত বিচার বিভাগ কখনোই স্বাধীন ছিল না। এজন্য কমিশন বলেছে, বিচার বিভাগকে পুরোপুরি স্বাধীন ও কার্যকরভাবে স্বাধীন করতে হবে। এটি ৩৫২ পৃষ্ঠার একটি বড় রিপোর্ট।
প্রধান উপদেষ্টার এই প্রেস সচিব বলেন, লিগ্যাল সার্ভিসে স্বচ্ছতা আনার জন্য জাজ অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যাপারে নতুন কিছু রিকমেন্ডেশন দেওয়া হয়েছে। তার আলোকে কিন্তু কাজও হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, জাজ অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যাপারে নতুন নীতিমালা নিয়ে আসা হয়েছে। আরেকটা ছিল অ্যাটর্নি সার্ভিস স্থায়ী করার বিষয়। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর অনেক দেশে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস আছে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন সারা বাংলাদেশের ৪ হাজারের মতো পাবলিক প্রসিকিউটর থাকে। সরকার তাদের নিয়োগ দেয়। দেখা গেছে, সরকারের কাছাকাছি যারা তাদের মধ্য থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টটা করা হতো। এই সরকার এলে তার মতো করে প্রসিকিউটর নিয়োগ করেন, আবার আরেক সরকার তার মতো করে নিয়োগ দেন। এই কথাটাকে বাদ দিয়ে একটা স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট হবে, যেভাবে বিসিএসে হয়।
স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, কমিশন স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার কথা জানিয়েছেন। যেগুলো সাধারণত পুলিশ তদন্ত করে সেগুলো গভর্মেন্ট পলিটিক্যালি ব্যবহার করে। ফলে যে তদন্তগুলো হয়, সেগুলো পলিটিক্যাল মাস্টারকে হ্যাপি করার জন্য। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের কেসগুলো কীভাবে কলুষিত হয়েছে পুলিশের তদন্তের কারণে। এজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার কথা বলা হয়েছে।
শফিকুল আলম আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চগুলো ডিভিশনে সেটআপ করার জন্য তারা বলেছেন। কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। স্বাধীনতার পর আমাদের হাইকোর্ট যেখানে ছিল, এখনও সেখানেই আছে। এজন্য হাইকোর্টের বেঞ্চগুলো বাড়িয়ে তারা ডিভিশনে নেওয়ার কথা বলেছে। এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টগুলো উপজেলা পর্যন্ত নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।
বিষয়: জুলাই অভ্যুত্থান জাতীয় ঐকমত্যে রাজনৈতিক দল সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।