ছয় মাসে ইউনূস সরকারের সাফল্য, সংস্কার ও কূটনীতি
বার্তা বিভাগ | প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:২৯
![ফাইল ফটো](https://www.newsflash71.com/pmanager/untitled-1-20250208112910.jpg)
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ছয় মাস পূর্ণ করেছে। এই অর্ধ-বার্ষিক মেয়াদে সরকারের নেওয়া নীতিগত সিদ্ধান্ত, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ, কূটনৈতিক অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা হয়েছে। গত ছয় মাসে এই সরকার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখিয়েছে।
রাষ্ট্র সংস্কারে নতুন দিগন্তের সূচনা
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই লক্ষ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন—এই ছয়টি ক্ষেত্রে সংস্কার আনার জন্য পৃথক পৃথক কমিশন গঠন করা হয়।
সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত কমিশন ইতিমধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যেখানে সংসদীয় ব্যবস্থা আরও কার্যকর করার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কারের লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে বিচারকদের নিয়োগ ও প্রেষণ নীতিতে পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যকারিতা বাড়াতে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার এই সংস্কারগুলোকে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের শাসন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও উন্নয়নের পদক্ষেপ
অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও অন্তর্বর্তী সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। বাজার তদারকি জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা এবং মুদ্রানীতিতে কিছু কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
বিনিয়োগ আকর্ষণ: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ কর ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
রপ্তানি খাতে উজ্জীবন: দেশের রপ্তানি খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পকে চাঙ্গা করতে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
৮ আগস্ট সরকার গঠনের পর থেকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সবচেয়ে কঠিন যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে, তা হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। দায়িত্ব গ্রহণের সময় থেকেই সরকার দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কঠোর অবস্থান গ্রহণের ঘোষণা দেয়। সন্ত্রাস দমন, সীমান্ত অপরাধ, চোরাচালান এবং শহরাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব।
বিশেষ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। টেকনাফ ও কক্সবাজার অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
অনলাইন জালিয়াতি, হ্যাকিং এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ইউনিট সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ভুয়া তথ্য প্রচার ও ডিজিটাল প্রতারণা বন্ধে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
কূটনৈতিক সাফল্য
ইউনূস সরকারের ছয় মাসের অন্যতম বড় সাফল্য আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে এবং মানবাধিকার ইস্যুতে সরকার তার নীতি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা চলছে, যা ভবিষ্যতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার নতুন ধারা শুরু হয়েছে, যদিও এখনও কার্যকর সমাধান আসেনি।
বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে সরকার কৌশলী ভূমিকা রাখছে, যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান
অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। তবে, বিরোধীদলগুলো বিশেষ করে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
সরকার বলছে, সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করেই নির্বাচন আয়োজন করা হবে। বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানাচ্ছে, যা নিয়ে আলোচনা চলছে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সূত্র : এনটিভি
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।