ভেঙে পড়া অর্থনীতি টেনে তোলার চেষ্টায় সরকার
বার্তা বিভাগ | প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৫
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে গত বছরের ৮ আগস্ট শপথ নেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভেঙে পড়া দেশের অর্থনীতি টেনেটুনে ওপরে তুলতে মরিয়া হয়ে পড়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এরই মধ্যে তাদের ছয় মাস পার হলো।
গত ৫ আগস্ট প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণ রেখে বাংলাদেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সেই পাহাড়সম ঋণ অন্তর্বর্তী সরকারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিভাবে সেই ঋণ কমিয়ে আনা যায়, সেই লক্ষ্যে নিরলস কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
একই সঙ্গে প্রবাসী আয়, রিজার্ভসহ রপ্তানি আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। যার সুফল এখনই পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট নিয়ে এই সরকারকে শুরুতেই বিপাকে পড়তে হয়েছে। তখন ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারেনি, ব্যাংকগুলোতে টাকা তুলতে গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের বাধার সম্মুখীন ও হয়রানি হতে হয়েছিল।
এতে দেশের ভিতরে টাকা তুলতে না পেরে ব্যাংক খাতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। সেই অস্থিরতা এখন নেই। এখন গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারছে। দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে মুখ থুবড়ে পড়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি। এতে এলসি প্রায় বন্ধের দিকে ছিল। কিন্তু সরকারের প্রচেষ্টায় এখন সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে। গত ছয় মাসে তিন হাজার ৬৬৪ কোটি টাকার এলসি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে সিংহভাগ এলসি শেষ তিন মাসে হয়েছে।
তবে পুঁজিবাজার ও পোশাকশিল্প অসন্তোষের কারণে বিপাকে পড়েছে নতুন এই সরকার। ছয় মাস পার হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। এখনো সূচক পতন হচ্ছে। লেনদেন তিনশ-চারশ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান করছে। এর মধ্যেও শেয়ার কারিসাজি চলছে। তবে পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিভিন্ন সংস্কার শুরু হয়েছে। বিএসইসির নেতৃত্বে পুঁজিবাজারের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ইতোমধ্যে সংস্কার টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সেখানে নিয়মিত মনিটরিং হচ্ছে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে ধারাবাহিক কাজ হচ্ছে।
পোশাকশিল্প অসন্তোষে ইতোমধ্যে বিপুল লোক কর্মসংস্থান হারিয়েছে। আরও হারানোর ঝুঁকিতে আছে। এই সমস্যা থেকে এখনো সরকার বেরিয়ে আসতে পারেনি। অন্যদিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলারের দাম বৃদ্ধি, বড় বড় প্রকল্পে অর্থ ছাড় কমে যাওয়াসহ বেশকিছু কারণে অপ্রত্যাশিতভাবে কমেছে রাজস্ব আদায়।
পুঁজিবাজার বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের পুঁজিবাজার সংস্কারের ছাপ বিনিয়োগকারীরা জুনের মধ্যেই দেখতে পাবেন। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়বে মন্তব্য করে মমিনুল ইসলাম বলেন, জুনের মধ্যে অর্থনীতির অনেক জায়গাই ভালো হবে। উত্তরণের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগের পরিবেশ আরও ভালো হবে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বেড়ে যাচ্ছে। এতে পুঁজিবাজারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে।
গত ছয় মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৮ শতাংশের বেশি জানিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে দেশের রিজার্ভের পতন রোধ হয়ে ফিরেছে স্থিতিশীলতা। কাটছে দেশে-বিদেশি বিনিয়োগে খরা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বাস্তবায়নের হার সর্বনিম্ন অবস্থায় থেকে ফিরতে শুরু করেছে। তবে দেশীয় উৎপাদন এবং কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। পোশাকশিল্পে চলছে শ্রমিক অসন্তোষ। এসব কারণে অর্থনীতি এখনও স্থবির। তবে অর্থনীতিকে সক্রিয় করার বিভিন্ন উদ্যোগ ইতোমধ্যে নিয়েছে সরকার। যা ইতিবাচকভাবে দেখছেন তারা।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে দেশের জনগনের ব্যাপক প্রত্যাশা ছিল, অল্প সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর হাতছানি দেবে দেশের অর্থনীতি, কিন্তু দিনদিন সেই প্রত্যাশা মরীচিকা মনে করতে শুরু করছে জনগণ জানিয়ে তারা বলছেন, গত সরকারের লুটপাটের কারণে বিপাকে পড়েছে ব্যাংক খাত। লুটের টাকার অধিকাংশ বিদেশে পাচার হয়েছে। পাচারের অর্থ দেশে ফেরাতে চেষ্টা করছে নতুন সরকার।
অর্থনীতিবিদরা আরও বলছেন, অর্থনীতির তিন-চারটি বাদে বাকী সব সূচক এখন নিম্নমুখী। সবমিলিয়ে জনগণ এখন বেশি দুশ্চিন্তায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। মূল্যস্ফীতি এখন মানুষের সঞ্চয়ের গলা চেপে রেখেছে। এতে জীবনের ব্যয়ভার বহন করে হাঁপিয়ে উঠেছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সালেহউদ্দিন আহমেদ ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতির ব্যাপক সংস্কারের ঘোষণা দেন। ইতোমধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকা ব্যাংকগুলোর বোর্ড সদস্যদের পরিবর্তন করা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সংকট কমিয়ে আনতে দিয়েছে বিশেষ আর্থিক সহায়তা। এছাড়া পরিবর্তন আনা হয়েছে অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর। যার সুফল পেতে সময় লাগবে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতি আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এটা রিজার্ভের স্থিতিশীলতা ও সন্তোষজনক সুদের হারের মাধ্যমে এ অবস্থার উত্তরণ হবে। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নানা চেষ্টার পরও দুর্বল অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাদের মতে, অর্থনীতি সচল হওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। যা ফিরাতে পারছে না এই সরকার।
নানা সংকটের মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এতে রিজার্ভ আপাতত স্থিতিশীল হয়েছে। বিদেশি ঋণ পাওয়ার বেশকিছু আশ্বাস এসে গেছে। ঋণ আসা শুরু করছে। এখন ডলারের বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ ফেরাতে ও ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছি। ব্যাংকগুলোতে সংস্কার করে তারল্য সংকট দূর করা হচ্ছে। এসব সুফল পেতে সময় লাগবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়ে। বর্তমানে ঋণের চাহিদা কমে গেছে। এতে উৎপাদন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থনীতি উন্নয়ন স্বার্থে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ড বেগবান করতে হবে জানিয়ে তারা বলেন, এই খাতে কর্মকাণ্ড বাড়লে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বাড়বে, যা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
তারা আরও বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এখন তা কমে গেছে, এটা ভাল না। কারণ বেসরকারি খাতে ঋণ কমলে সেটা অর্থনীতির স্থবিরতার লক্ষণ বলে গণ্য হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকটি দেখতে হবে। সে জন্য উৎপাদনশীল খাতে যাতে যথেষ্ট ঋণপ্রবাহ থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দরকার একটা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, গত আড়াই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি কমে গেলে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ে না। তবে শর্ত শিথিল করায় ধীরে ধীরে আমদানি বাড়ছে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৮১ শতাংশে নেমে আসা দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক।
ব্যাংক খাত
সরকারের শুরুতেই ব্যাংক খাতে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ শুরু হয়। এতে ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পষর্দ ভেঙে সেগুলোর আসল চিত্র বের করে আনা, খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা উদ্ঘাটন ও ডলারের সংকট মেটানো প্রাধান্য পায়। এরই মধ্যে ডলারের সংকট মিটিয়ে রিজার্ভের পতন থামানো গেছে। অক্টোবর থেকে রিজার্ভের ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যদিও আকুর বিল পরিশোধ কারণে রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। তবে ডিসেম্বরে মোট রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।
গত বছরের জুনে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। ওই সময় খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের এই হার দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দায়িত্ব নিয়ে ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এখন সেই খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কাজ করছেন তিনি। অপরদিক ব্যাংকগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে তারল্য সংকট কমিয়ে আনছে সরকার। এখন ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহক তাদের চাহিদা মতো টাকা তুলতে পারছে।
ইতোমধ্যে দেশের আমদানি ও রপ্তানি স্বাভাবিক হয়েছে। যদিও সরকারের শুরুতে আমদানি ও রপ্তানিতে হোঁচট খেতে হয়। তবে এখন সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে সরকার। আমদানি ও রপ্তানি গত ছয় মাসে দেশে (পহেলা আগস্ট ২০২৪ সাল থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ সাল) তিন হাজার ৬৬৪ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার টাকার এলসি খোলা হয়। এর মধ্যে সিংহভাগ এলসি গত তিন মাসে হয়েছে। এখনও সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সরকার ও গভর্নরের যে তাড়না রয়েছে, তাতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রবাসী আয় ও রিজার্ভ
চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে (আগস্ট থেকে জানুয়ারি) প্রবাসী আয় এসেছে এক হাজার ৪০৪ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) একই সময় (আগস্ট থেকে জানুয়ারি) প্রবাসী আয় এসেছিল এক হাজার ৯৩ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এই সময়ের মধ্যে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩১০ কোটি ৮৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।
আগের বছরের (২০২৩) আগস্ট তুলনায় গত বছরের (২০২৪) আগস্টে বেড়েছে ৩৯ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। আগের বছরের সেপ্টেম্বর তুলনায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় বেড়েছিল ৮০ দশমিক ১৭ শতাংশ। আগের বছরের অক্টোবর তুলনায় গত বছরের অক্টোবরে প্রবাসী আয় বেড়েছিল ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের বছরের নভেম্বর তুলনায় গত বছরের নভেম্বরে প্রবাসী আয় বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আগের বছরের ডিসেম্বর তুলনায় গত বছরের ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় বেড়েছিল ৩২ দশমিক ৫২ শতাংশ। আগের বছরের জানুয়ার তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় বেড়েছিল তিন দশমিক ৪১ শতাংশ। গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিপিএম৬ হিসেবে দেশে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২০ কোটি ডলারে অবস্থান করেছে। মোট রিজার্ভ দুই হাজার ৫৪০ কোটি ডলার।
বিদেশি ঋণ
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরের (২০২৪–২০২৫ ) প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশে মোট ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ডিসেম্বরে ২০০ কোটি ডলারের মতো ছাড় হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে ছাড় হয়েছে ১০০ কোটি ডলার। অন্যদিকে আলোচ্য ছয় মাসে সরকারকে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৯৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ১৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সব মিলিয়ে ৪০৬ কোটি ডলারের বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল। এবার একই সময়ে এর চেয়ে ৫৩ কোটি ডলার কম এসেছে।
পুঁজিবাজার
গত ৮ আগস্ট ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। পরের কর্মদিবস ১১ আগস্ট ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ১০ কোটি টাকা। সেই লেনদেন কমে গত ৩ নভেম্বর লেনদেন হয়েছিল ৪৩১ কোটি টাকা। সেখান থেকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৪২৯ কোটি টাকায়। অবশ্য গত ১৬ অক্টোবর লেনদেন হয়েছিল ২৯৬ কোটি টাকা। এই ধরনের লেনদেন ছিল অন্তর্বর্তী সরকার আমলে সর্বনিম্ন লেনদেন।
গত ৮ আগস্ট ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ছিল পাঁচ হাজার ৯২৪ পয়েন্ট। পরে বেড়ে গত ১১ আগস্ট ডিএসইএক্স হয়েছিল ছয় হাজার ১৬ পয়েন্টে। সেখান থেকে বেড়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসইএক্স দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ১৭৯ পয়েন্টে। অপরদিক গত ৮ আগস্ট ডিএসইতে মূলধন দাঁড়িয়েছিল সাত লাখ তিন হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। পরের কর্মদিবস ১১ আগস্ট বাজারে মূলধন বেড়ে হয়েছিল সাত লাখ ১৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। গত ৭ নভেম্বর বাজার মূলধন দাঁড়িছিল ছয় লাখ ৭১ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। কিন্তু গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাজার মূলধন দাঁড়ায় ছয় লাখ ৭৩ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বা ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) শেষে এনবিআর রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৭ হাজার ৭২৩ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। চলতি অর্থবছর এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৩৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এর বিপরীতে আদায় এক লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৭ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা কম। এর মধ্যে আয়কর খাতে প্রথম ছয় মাসে চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ১৮৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। একই সময় শুল্ক খাতে ৬১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা। ভ্যাট খাতে ৭৬ হাজার ৩১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ১৮১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, রাজনৈতিক ও ব্যবসায় অস্থিরতায় বড় প্রভাব পড়েছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ১ দশমিক ৮১ শতাংশে নেমেছে। এর আগের অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) একই প্রান্তিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থির মূল্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ১৬ শতাংশ।
আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৩৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে আট দশমিক ২২ শতাংশ। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে এক দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাঁচ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। মন্দার কারণে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।