রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৬ চৈত্র ১৪৩১

বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তরে সহায়তা দেবে চীনা এক্সিম ব্যাংক

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৪:৩১

ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চায় চীন। এজন্য বাংলাদেশে চীনা উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তরে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে দেশটির এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক (এক্সিম ব্যাংক) এর চেয়ারম্যান চেন হুয়াইউ। এজন্য তার এক্সিম ব্যাংক অর্থায়ন করবে।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫-এর সাইড লাইনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব ও দূরপ্রাচ্যের এশিয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়ার বাজারগুলোর জন্যও একটি আদর্শ অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

চীনের এক্সিম ব্যাংক বাংলাদেশে বেইজিংয়ের অর্থায়নে অবকাঠামো ও জ্বালানি প্রকল্পগুলোর মূল অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান। তবে এবারই প্রথম তারা দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে চীনা বেসরকারি নির্মাতাদের বিনিয়োগে সহায়তা করার আগ্রহ দেখিয়েছে।

চেন হুয়াইউ এর সাথে সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, কৌশলগত অবস্থান এবং মানবসম্পদ বাংলাদেশকে চীনসহ বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিগুলো একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

তিনি আরো বলেন, তার সরকার শীর্ষ চীনা বেসরকারি উৎপাদকদের বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থানান্তরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং তাদের জন্য আকর্ষণীয় সুবিধা ও একটি বাণিজ্য করিডোর প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।

‘উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চীনের পরিপূরক হতে পারে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস আরও জানান, অন্তর্র্বতী সরকার চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি বিশেষ চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বড় বড় নতুন বন্দর নির্মাণ করছে, যা শুধু দেশের অর্থনীতিকেই নয়, নেপাল ও ভুটানের স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর পাশাপাশি ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করবে।

এসময় চেন হুয়াইউ বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব ও দূরপ্রাচ্যের এশিয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়ার বাজারগুলোর জন্যও একটি আদর্শ অবস্থানে রয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, আরও বেশি চীনা কোম্পানি এখন বৈশ্বিক বাজারে যাচ্ছে এবং তার ব্যাংক তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদন খাতের উন্নয়নে সহায়তা করবে।

চেন হুয়াইউ বলেন, ব্যাংকটি বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও সহায়তা করবে, যা দেশের সামগ্রিক সামাজিক-অর্থনৈতিক ও টেকসই প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

ভিয়েতনাম কীভাবে চীনা ও পশ্চিমা উৎপাদনকারীদের আকৃষ্ট করে তার অর্থনীতিকে রূপান্তরিত করেছে, সেই প্রসঙ্গ তুলে চেন বলেন, বাংলাদেশকেও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে।

এসময় অধ্যাপক ইউনূস ভিয়েতনামের কাছ থেকে শিখবো বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ভিয়েতনামের কাছ থেকে শিখবো’।

বৈঠকে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন প্লান্টের মতো নতুন অবকাঠামো প্রকল্পে এক্সিমের অর্থায়ন ও সহায়তার দ্রুত দাবি জানান। ব্যাংকের কমিটমেন্ট ফি কমানোর জন্যও ব্যাংকটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা, যা প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে।

চেন বলেন, তার ব্যাংক এসব প্রস্তাব খতিয়ে দেখবে। তিনি চীনা মুদ্রা আরএমবিতে আরও রেয়াতি ঋণ নিতে বাংলাদেশকে স্যুইচ করার আহ্বান জানান।

বৈঠকে জানানো হয়, উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিগগির আবার বৈঠকে বসবেন, যাতে এই বৈঠকে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি ও পরিবহন উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top