নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার জীবনের সীমানা পেরিয়ে চলে গেলেন চিরনির্বাসনে
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৩

নির্বাসিত কবি, লেখক ও কলামিস্ট দাউদ হায়দার জীবনের সীমানা পেরিয়ে চলে গেলেন চিরনির্বাসনে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে জার্মানির বার্লিনের একটি বয়স্ক নিরাময় কেন্দ্রে (বৃদ্ধাশ্রমে) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও দাউদ হায়দারের ভাতিজি শাওন্তী হায়দার জানান, স্থানীয় সময় রাত ৯টা ২০ মিনিটে কবির মৃত্যু হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলায় জন্ম নেওয়া দাউদ হায়দার একাধারে কবি, লেখক ও সাংবাদিক ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি হিসেবে তার পরিচিতি। সত্তর দশকের শুরুতে ‘দৈনিক সংবাদ’-এর সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’।
১৯৭৩ সালে দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ কবিতায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ ওঠে। এর জেরে ১৯৭৪ সালের ১১ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় দুই মাস কারাভোগের পর মুক্তি দেওয়া হলেও, নিরাপত্তার অভাবে ২১ মে ভোরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে।
নিজের লেখায় দাউদ হায়দার লিখেছিলেন, নির্বাসনের সময় তার কাছে ছিল মাত্র ৬০ পয়সা, একটি ব্যাগে কয়েকটি পোশাক, স্লিপার, একটি টুথব্রাশ এবং কবিতার বই। কলকাতায় কয়েক বছর কাটানোর পর, ভারত সরকারও তাকে বহিষ্কার করে। এরপর জার্মান সাহিত্যিক ও নোবেল বিজয়ী গুন্টার গ্রাসের সহায়তায় ১৯৮৭ সালে জার্মানিতে আশ্রয় নেন তিনি।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। গত বছর ডিসেম্বরে বার্লিনের বাসায় সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান তিনি। এরপর হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। যদিও পরে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন, কিন্তু আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।
চিরকুমার দাউদ হায়দার বার্লিনেই ছিলেন নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করে। ১৯৭৩ সালে লন্ডন সোসাইটি ফর পোয়েট্রি তার একটি কবিতাকে ‘দ্য বেস্ট পোয়েম অব এশিয়া’ সম্মানে ভূষিত করেছিল।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।