শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অস্বীকৃতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২৫, ১১:২৮

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। বুধবার (১১ জুন) এক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস।

মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফর করছেন, যেখানে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে কথিত পাচার হওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধারের জন্য সমর্থন চাইছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে ড. ইউনূস বলেছেন, যুক্তরাজ্যের উচিত ‘নৈতিকভাবে’ তার সরকারকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে ‘চুরি হওয়া’ অর্থ খুঁজে বের করতে সাহায্য করা। এই বেশিরভাগই বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

স্টারমার অবশ্য এখনো তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি হননি বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, তার সঙ্গে আমার সরাসরি কথা হয়নি।

কিয়ার স্টারমার বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করবেন, এ বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, এগুলো চুরির টাকা।

যুক্তরাজ্য সরকার ইতিমধ্যে অর্থ খুঁজে পেতে সহায়তা দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা উদ্ধারে বাংলাদেশকে সহায়তার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ‘আইনি ও...নৈতিকভাবে’ বাধ্যবাধকতা অনুভব করা উচিত। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তার সফরের লক্ষ্য ছিল যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে এ বিষয়ে ‘আরো উদ্যমী’ সহায়তা বের করে আনা।

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার শাসনামলে আনুমানিক ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। যুক্তরাজ্য এসব অর্থের অন্যতম প্রধান গন্তব্য। এছাড়াও কানাডা, সিঙ্গাপুর, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ পাচার হয়েছে বলেও দাবি করেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, “এটা কেবল শুরু। আমাদের লক্ষ্য যুক্তরাজ্যের সব স্তরের সহায়তা লাভ—ব্যবসা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত।”

প্রতিবেদনটি উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তের ফলে ব্রিটিশ লেবার পার্টি এবং স্টারমারের ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ও সাবেক দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক—যিনি শেখ হাসিনার ভাগ্নি—ব্যক্তিগতভাবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে সম্পদ ও আর্থিক সহায়তা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেন, শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

টিউলিপ সম্প্রতি ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। তবে ড. ইউনূস স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, তিনি টিউলিপের সঙ্গে দেখা করবেন না। তার ভাষায়, “এটা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া।”

ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) লন্ডনে হাসিনার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ছেলের মালিকানাধীন দুটি প্রপার্টির ওপর ফ্রিজিং অর্ডার জারি করেছে। এর মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের কিছুটা হদিস মিলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ড. ইউনূস বলেন, “আমরা যুক্তরাজ্যের জনগণের সমর্থন চাই। আমরা চাই তারা বুঝুক, এটি শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়—এটি একটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।”



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top