কালো পতাকায় লন্ডনে 'অভ্যর্থনা' ইউনুসকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও বাতিল!
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২৫, ১৪:১৩

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সফরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেছেন। সফরের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল সরকারি সফরে যাচ্ছেন তিনি। সফরকালে বাকিংহাম প্যালেসে যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় রাজা চার্লসের হাত থেকে ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড নেবেন তিনি । এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথাও জানানো হয়েছিল।
কিন্তু লন্ডনে নেমেই ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়েন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গণমাধ্যম ও বাংলাদেশ হাই কমিশনের সূত্রমতে ড. ইউনূসকে বিমান বন্দরে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ হাই কমিশন ছাড়া ব্রিটিশ সরকার বা রাজার কোনো প্রতিনিধি বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন না। প্রথা হচ্ছে, কোনো রাষ্ট্রীয় অতিথি আসলে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে সেই রাষ্ট্রের প্রতিনিধি কেউ উপস্থিত থাকেন। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য সেটা হয়নি।
উল্টো লন্ডন সফরে গিয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানের মুখে পড়তে হয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসকে। শত শত বাংলাদেশি জনতা ইউনূসের হোটেলের বাইরে কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীরা ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে চলতে থাকা গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নৃশংসতার প্রধান মাথা বলে অভিযোগ তুলে পদত্যাগের দাবি তোলেন। তাদের কারো কারো হাতে ছিল ‘গো ব্যাক’, ‘সে নো টু ইউনূস’ লেখা প্ল্যাকার্ডও।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ শেখ হাসিনাকে দেশছাড়া করার পর গোটা ইউনূসের বাংলাদেশে যে অরাজকতা, উগ্র মৌলবাদ ও হিংসার রাজত্ব চলছে তার জন্য দায়ী প্রশাসন। বাংলাদেশের মাটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণহত্যা, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে শিকেয় তুলেছে এই মৌলবাদীরা। এসময় দ্রুত নির্বাচনের ও আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়ার দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা।
মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ১৩জুন লন্ডনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডনে যান। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে এই সফরে যান তিনি। কিন্তু সেখানে পা রাখতেই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হলো তাঁকে।
এই সফরে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ছিল ইউনূসের। তবে জানা যাচ্ছে, সেই বৈঠকের সম্ভাবনা বাতিল হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে যে কিংস চার্লস হারমোনি পুরস্কার নেওয়ার কথা ছিল ইউনূসের, তা থেকেও বঞ্চিত হতে পারেন তিনি।
এদিকে মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ চেয়ে শেখ হাসিনার ভাগনি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠির বিষয়টি ব্রিটিশ গণমাধ্যমসহ দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। কিন্তু প্রেস সচিব তখন টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠির বিষয়টি অস্বীকার করেন। কোনো চিঠি পাননি বলে জানান। কিন্তু গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদদের কাছে সেই চিঠি হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা একটি চিঠি পেয়েছি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সাম্প্রতিক বিদেশ সফরকে ঘিরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তাঁর যুক্তরাজ্য সফরকে অনেকে ‘আত্মকেন্দ্রিক মিশন’ হিসেবে বর্ণনা করছেন, যার উদ্দেশ্য দেশ ও জনগণের কল্যাণ নয়, বরং নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় করা। সমালোচকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও রূপান্তরের দায়িত্বের পরিবর্তে তিনি রাজনৈতিক মর্যাদা জোরদার করতেই সফর করেছেন। লন্ডনে যাওয়ার পর থেকেই ইউনূসের বিরুদ্ধে যা চলছে তা নিতান্তপক্ষেই বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।