শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২

যে বাঙালিকে কৃতজ্ঞচিত্তে সম্মান জানায় জাপানিরা

নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:২৩

সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত টোকিও ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল-এ সাহসী ভিন্নমতের রায় দিয়ে বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় জন্ম নেওয়া বিচারপতি ড. রাধাবিনোদ পাল। সেই রায়ের সুবাদেই জাপানের জনগণের কাছে তিনি পরিণত হয়েছেন এক অবিস্মরণীয় বীর ও চিরদিনের শ্রদ্ধার প্রতীকে।

জাপানের প্রয়াত সম্রাট হিরোহিতো একবার বলেছিলেন,

“যতদিন জাপান থাকবে, বাঙালি খাদ্যাভাবে বা অর্থকষ্টে মরবে না। জাপান হবে বাঙালির চিরকালের নিঃস্বার্থ বন্ধু।”

এই অঙ্গীকার ছিল রাধাবিনোদ পালের প্রতি জাপানের কৃতজ্ঞতার প্রতিফলন।

১৮৮৬ সালের ৭ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শালিমপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া রাধাবিনোদ পাল আইন ও শিক্ষা জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তিনি ১৯৪৬ সালে টোকিও ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান।

ট্রাইব্যুনালে জাপানি নেতাদের যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হলে পাল একমাত্র বিচারক হিসেবে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন—এই বিচার প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। তার মতে, “যারা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তাদের নিজেদের শর্তে ট্রাইব্যুনাল গঠন ও বিচার করার নৈতিক অধিকার নেই।” তিনি যুক্তি দেন, হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলে মিত্রশক্তি নিজেরাই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।

এই রায়ের মাধ্যমে জাপান বড় ধরনের যুদ্ধাপরাধের দায় ও ক্ষতিপূরণের বোঝা থেকে মুক্তি পায়। রাধাবিনোদ পালের ন্যায়নিষ্ঠ অবস্থান জাপানকে শান্তিপ্রিয় ও উন্নয়ননির্ভর রাষ্ট্র গঠনে অনুপ্রাণিত করে।

তাঁর সম্মানে টোকিওর ইয়াসুকুনি স্মৃতিসৌধে একমাত্র অযোদ্ধা হিসেবে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। কিয়োতো শহরে রয়েছে তাঁর ভাস্কর্য ও জাদুঘর। ১৯৬৬ সালে মৃত্যুর এক বছর আগে সম্রাট হিরোহিতো তাঁকে প্রদান করেন জাপানের সর্বোচ্চ সম্মাননা “ফার্স্ট অর্ডার অব দ্য সেক্রেড ট্রেজার।”

আজও জাপানের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত রাধাবিনোদ পালের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করেন। ২০০৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে ভারত সফরে গিয়ে তাঁর পুত্র প্রশান্ত পালের সঙ্গে দেখা করেন, যা দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতীক হয়ে আছে।

১৯৫২ সালে হিরোশিমা শান্তি উদ্যানে দাঁড়িয়ে রাধাবিনোদ পাল বলেছিলেন,

“যদি আবার জাপান যুদ্ধে জড়ায়, তবে তা হিরোশিমার নিরীহ নিহতদের প্রতি চূড়ান্ত অবমাননা হবে।”

তার এই আহ্বান আজও অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আসছে জাপান—শান্তির দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে।

 

নিফ্লা৭১/ওতু



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top