শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

নেই পাসপোর্ট, তবুও কীভাবে দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৭

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার আলোচনা আবারও রাজনীতির গরম ইস্যু। দলের নেতাদের দাবিতে জানা যাচ্ছে, চলতি মাসেই তিনি দেশে ফিরতে পারেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে— বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াই কীভাবে ফিরবেন তিনি?

 

কারণ, বর্তমানে তারেক রহমানের কাছে বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই। এমনকি নতুন করে পাসপোর্টের জন্য আবেদনও করেননি তিনি।

২০০৮ সালে বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেই পাসপোর্ট আর নবায়ন হয়নি।

২০১৮ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দাবি করেন, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী-মেয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ‘সারেন্ডার’ করেছেন। ব্রিটিশ হোম অফিস সেই পাসপোর্ট বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠিয়েছে বলেও তখন জানানো হয়।

 

তখন বিএনপি এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলে, যদি সত্যিই পাসপোর্ট জমা দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তা যেন সরকার প্রমাণসহ দেখায়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এরপর আর কোনো পাসপোর্ট প্রদর্শন করা হয়নি।

 

এখন বাস্তবতা হলো— নবায়ন না হওয়ায় তারেক রহমানের হাতে বর্তমানে বাংলাদেশের কোনো বৈধ পাসপোর্ট নেই। ফলে দেশে ফিরতে হলে তাকে নতুন পাসপোর্ট নিতে হবে— এমন ধারণা অনেকের। কিন্তু বাস্তবে এরও বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরায় পাসপোর্ট বড় বাধা নয়।

কারণ, তিনি চাইলে ট্রাভেল পাস নামের একটি অস্থায়ী ভ্রমণ নথি ব্যবহার করে খুব সহজেই দেশে ফিরতে পারেন।

 

এটি মূলত এক ধরনের অস্থায়ী ভ্রমণ নথি, যা বিদেশে অবস্থানরত পাসপোর্টবিহীন কোনো বাংলাদেশি নাগরিককে শুধু একবার বাংলাদেশে ফেরার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে থাকায় পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ, নতুন পাসপোর্ট করা সম্ভব নয়

নাগরিকত্ব প্রমাণিত, কিন্তু পাসপোর্ট নেই (যেমন: শিশু)

 

বিদেশে অবৈধ অবস্থানে থাকা শ্রমিক

আটক বা ডিটেনশনে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো— বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার প্রমাণ। যেমন:

জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পুরোনো পাসপোর্ট (যদি থাকে), নিকটাত্মীয়ের হলফনামা, স্কুল–কলেজের সনদ, কিংবা বিদেশে আটক হলে স্থানীয় পুলিশের কাগজপত্র ইত্যাদি।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ দেশে ফিরেছেন এভাবেই।

২০১৫ সালে নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে ভারতের মেঘালয়ে পাওয়া যায়। তার কাছে তখন কোনো পাসপোর্ট ছিল না। অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার ও কারাবাসও করতে হয় তাকে। পরে মামলার দায় থেকে মুক্ত হয়ে ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেন তিনি।

এরপর রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে সেই ট্রাভেল পাস ব্যবহার করেই তিনি দেশে ফেরেন।

 

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহির্গমন অনুবিভাগ সূত্র বলছে, তারেক রহমান চাইলে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে ট্রাভেল পাস নিতে পারবেন।

এর মাধ্যমে পাসপোর্ট ছাড়াই তিনি বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন। অর্থাৎ, তার দেশে ফেরার পথে পাসপোর্ট বড় প্রতিবন্ধক নয়।

 

সম্প্রতি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও বলেছেন,

যদি লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে চান, সরকার ভ্রমণসংক্রান্ত কাগজপত্র দিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। তার দেশে ফেরা তার নিজের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে। তবে তিনি চাইলে তার ভ্রমণ নথি কিংবা পাসপোর্ট–সংক্রান্ত বিষয়গুলো সরকার দেখবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ট্রাভেল পাস আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রতিটি দেশই তার নিজ নাগরিককে নিজ ভূখণ্ডে ফিরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নিতে বাধ্য।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৭ বছর পর গত মে মাসে দেশে এসেছিলেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। প্রায় এক মাস দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে গত জুনে তিনি ফের লন্ডনে ফিরে যান। দেশে থাকার সময় তিনি ভোটার নিবন্ধনও করেছেন।

 

এখন দলের ভেতরে–বাইরে সবার নজর—

কবে, কীভাবে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান, আর কবে তিনি ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করবেন?

সেটিই এখন দেখার বিষয়।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top