বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২

মঙ্গলবার ভোরে খালেদা জিয়ার মৃত্যু: শোকে স্তব্ধ দেশ, এভারকেয়ারে নেতাকর্মীদের ঢল

ডেস্ক রিপোর্ট | ঢাকা | প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২৭

ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গলবার সকাল ছয়টা। সূর্যের আলো ফোটার আগেই যেন অস্বাভাবিকভাবে ভারি হয়ে ওঠে দেশের আকাশ। ঘন কুয়াশা আর হিম বাতাসের মধ্যেও এক ধরনের স্তব্ধতা—অজানা শূন্যতার হাহাকার। ঠিক সেই সময়েই পৃথিবীকে বিদায় জানান বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

খবরটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়া এই সংবাদে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো দেশ। শিশু থেকে বৃদ্ধ—কেউই বাদ যাননি। দল-মত ও ধর্ম নির্বিশেষে চোখ ভিজেছে সবার। নেতাকর্মীরা বুক চাপড়ে কাঁদছেন, কাঁদছে দেশ।

যার কণ্ঠে ছিল ঐক্য ও গণতন্ত্রের বাণী, যার নেতৃত্বে স্বপ্ন দেখতে শিখেছিল একটি প্রজন্ম—আজ তিনি নেই। এই বাস্তবতা মেনে নিতে না পেরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের পথে ঢল নামে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের। কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল এলাকা। কেউ নীরবে চোখ মুছছেন, কেউ স্মৃতিচারণ করছেন। মঙ্গলবার দিনভর এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েও নেতাকর্মীদের কান্নার রোল পড়ে। অনেককেই বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যেতে দেখা যায়। ঢাকাসহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতেও শোকে মুহ্যমান নেতাকর্মীরা।

খবর শোনার পরপরই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ একপলক দেখতে ছুটে আসেন এভারকেয়ার হাসপাতালে। হাসপাতালের প্রধান ফটক পরিণত হয় শোক, নীরবতা ও আবেগের এক প্রান্তরে। প্রধান ফটকের বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারিকেড, তার পাশেই হাজারো মানুষের অপেক্ষা—সবার চোখে জল।

সরকার খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে সাত দিনের শোক কর্মসূচি। তার মৃত্যুতে শোকে ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপির শীর্ষ নেতারা এভারকেয়ার হাসপাতালে অবস্থান করছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে শত শত মাইল দূর থেকে আসা মানুষদের অনেকেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন।

হাসপাতালের সামনে কথা হয় ৬০ বছর বয়সি আলেয়া বেগমের সঙ্গে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ১৩ বছর বয়সি নাতিকে নিয়ে এসেছেন তিনি। সকালে টেলিভিশনে মৃত্যুর খবর পেয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারেননি। হাসপাতালে ঢুকতে না পেরে পাশেই বসে অঝোরে কাঁদছেন, বারবার আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করছেন। আলেয়া বেগম বলেন, “খালেদা জিয়াকে মায়ের মতো ভালোবাসতাম। কয়েকবার দেখা হয়েছে। শেষবারের মতো এক নজর দেখতে এসেছি।”

একই অনুভূতির কথা জানান বগুড়ার সোনাতলার ৬৫ বছর বয়সি আনোয়ার হোসেন। ভোরে ফজরের নামাজ শেষে হাঁটতে বের হয়ে মোবাইলে ফেসবুক খুলতেই চোখে পড়ে মৃত্যুর খবর। পরিবারকে কিছু না জানিয়ে বাসে করে ঢাকায় ছুটে আসেন তিনি। বলেন, “মনকে আর বুঝাতে পারিনি।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা গোলাম কিবরিয়া বলেন, “আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া। তার বক্তব্য শুনতে কর্মসূচিতে যেতাম। আজ তাকে শেষবার দেখতে এসেছি, কিন্তু আর তো দেখা হবে না। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।”

নেতাকর্মীরা বলছেন, আজ তাদের চোখে ঘুম নেই—আছে শুধু অশ্রু আর স্মৃতির ভিড়। কেউ হারিয়েছেন একজন পথপ্রদর্শক, কেউ একজন অভিভাবক, কেউবা নির্ভরতার শেষ আশ্রয়। বাস্তবতা নির্মম হলেও কোটি মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন খালেদা জিয়া।

এদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে আসা সড়কের দুই পাশে ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকরা।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top