কী কারণে পতন হলো শেখ হাসিনার

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৬ আগষ্ট ২০২৪, ১৭:৩০

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র ও গণ–আন্দোলনের মুখে পরাজিত শাসকের মতই পালিয়ে গেলেন শেখ হাসিনা। সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করার পরেও তাকে এভাবে বিদায় নিতে হলো। যে শেখ হাসিনা বরাবরই দাবি করে এসেছেন- দেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন ও জনগণের ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা তিনিই করেছেন। সেখানে এভাবে করুণ পরাজয় কি অপরাধে হলো?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে- শেখ হাসিনার একগুঁয়েমি, অহংকার ও অতি আত্মবিশ্বাসকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন। সবশেষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষ ও শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পরও শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থানের কথা বলা হচ্ছিল।

এমনকি গত রবিবার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে মাঠে নামিয়ে শক্তি প্রদর্শন করে আন্দোলন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে সারা দেশে সংঘাত–সংঘর্ষে প্রায় ১০০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরপরও শক্ত হাতে দমনের কথা বলা হচ্ছিল।

রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণভবনে বসে শেখ হাসিনা তার সরকারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মন্ত্রী ও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন।

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রবিবারও সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। এরপরও পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে তারা ধারণা করেছিলেন। কিন্তু চাপ আরও বাড়তে থাকে। গতকাল সকালেই তারা বুঝতে পারেন, তাদের সময় শেষ হয়ে গেছে। এরপর শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন, সেই পর্যায়ে গত ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি ‘রাজাকার’ শব্দও ব্যবহার করেছিলেন। এতে তার একগুঁয়েমি ও অহংকারের বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছিল। এরপর শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন, আন্দোলন আরও জোড়ালো হয়।

সেই আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে শক্তি প্রয়োগ করায় গত ১৭ জুলাই থেকে কয়েক দিনে সারা দেশে দুই শ–এর বেশি প্রাণহানি ঘটে। এরপর সেনাবাহিনী নামিয়ে কারফিউ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। তবে শিক্ষার্থীরা সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে নামেন। বিপুলসংখ্যক প্রাণহানির ঘটিয়েও কোনো অর্জন ছিল না এ শাসকের। বরং দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগ একা হয়ে পড়েছিল।

নিজের দীর্ঘ শাসনে সবাইকে খেপিয়ে তুলেছিলেন তিনি। তাছাড়া সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ও অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। আর রাজনৈতিক দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের বাইরে অন্য সব দল সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায়। এর ফলে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দিক থেকেও একা হয়ে পড়েন।

এছাড়া পশ্চিমা বিশ্বকে শত্রু বানিয়ে শেষ পর্যায়ে ভূরাজনীতিতেও প্রায় একা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকার ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরপর তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করে এবং ক্ষমতা নিজের হাতে রাখেন। এই আলোচনা চলছিল অনেক দিন ধরে। সরকার চীনের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক রেখে চলছিল।

গত জুলাই মাসেই ৭ তারিখ থেকে দুই দিন চীন সফর করেছিলেন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ সেই সফরে অবশ্য ভালো ফল হয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল অনেক দিন ধরে। বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনাসহ তার নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন বেড়ে যায়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে নিজের এত দিনের রাজনৈতিক অর্জন ধ্বংস করেছেন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের অস্তিত্বকেও হুমকিতে ফেললেন তিনি। সূত্র: আমাদের সময়।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top