নেতাকর্মীরা চাইলে আওয়ামী লীগের হাল ধরতে প্রস্তুত জয়

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১১ আগষ্ট ২০২৪, ১৭:০৯

ছবি: সংগৃহীত

দলের নেতাকর্মীরা চাইলে দেশে এসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন জয়। তিনি বলেন, তার মা প্রবাসে থাকতে চান না এবং বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেষ দুই মেয়াদে শেখ হাসিনা অবসর নিতে চেয়েছিলেন বলেও জোর দিয়ে বলেন জয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তার মায়ের আবার সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।

সাক্ষাতকারে জয় বলেন, আমি গতরাতে (বৃহস্পতিবার) তার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি এখনো কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করেননি। তিনি (শেখ হাসিনা) এক জায়গাতেই আছেন। তাঁর ভিসা বা আশ্রয় প্রার্থনা নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে...সেগুলোর কোনোটিই সত্যি নয়।

তিনি আসলে যা চান তা হল- বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান। সেটা হতে পারে রাজনীতিতে ফেরা অথবা অবসরের জন্য ফেরা, সেটা কোনো বিষয় না। এটাই তাঁর শেষ মেয়াদ হতো, তাঁর বয়স ৭৬ বছর। তিনি চান তার গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় ফিরে যেতে, এটা তার বাড়ি। তিনি সেখানে বড় হয়েছেন। এটাই তার স্বপ্ন ছিল, তিনি বাংলাদেশের বাইরে নির্বাসনে থাকতে চান না।

শেখ হাসিনা দেশের জন্য রাজনীতি করেছেন, ক্ষমতার জন্য নয় উল্লেখ করে জয় বলেন, গত দুই মেয়াদেই তিনি (শেখ হাসিনা) অবসরে যেতে চেয়েছেন। এমনকি প্রতিটি নির্বাচনের আগে তিনি আমাকে দেশে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জন্য জোরাজুরিও করেছেন। আমাদের পরিবারের কেউই ক্ষমতা বা রাজনীতির প্রতি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন না।

ওই সময়ে মায়ের প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও এখন দলের নেতৃত্ব দিতে চান কি না, বিশেষ করে তার মায়ের দল আওয়ামী লীগের কর্মীরা এই সংকটময় সময়ে নেতৃত্ব খুঁজবে?

এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, আমার মনে হয়, এখন আমি এমনিতেই তা হয়ে গেছি। আপনি জানেন আমি এখন দলটির প্রধান হয়ে গেছি। তবে আমি কখনো এটা চাইনি। আমার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। কিন্তু যখনই আমি জানতে পারলাম, আমাদের দলের নেতারা হামলার শিকার হচ্ছেন, তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আমি বলেছি, তাদের আমি ছেড়ে দিতে পারি না। আমি আমার দলের অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমাদের প্রায় সব মন্ত্রীর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষের বাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে...এই পরিস্থিতিতে, যেটা দরকার আমি সেটাই করব। আওয়ামী লীগের এখনো লাখ লাখ অনুসারী রয়েছে, রাতারাতি এটা গায়েব হয়ে যেতে পারে না।

আগামী নির্বাচন যখনি অনুষ্ঠিত হবে সেখানে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে পারবে বলে মনে করেন জয়, কারণ বিগত বছরগুলোতে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দলগুলোর একটি এবং নেতা ও কর্মীরাই সিদ্ধান্ত নেবেন, পরবর্তীতে কে দলের হাল ধরবেন।

জয় আরও বলেন, যদি আওয়ামী লীগের কর্মীরা আমাকে ফিরতে বলেন, আমি বিষয়টি ভেবে দেখব। এটা দলের সদস্যদের ওপর নির্ভর করছে। যদি দল চায় তিনি (শেখ হাসিনা) নেতা হন, তবে তিনি নেতা হবেন। আমি যেমন বলেছি- আমরা একটি গণতান্ত্রিক দল। দলের নেতৃত্ব কে দেবেন, তা সম্পূর্ণরূপে দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্ভর করবে।

নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের বিষয়ে জয় বলেন, এই সরকারের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই এবং সংবিধানে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান রয়েছে।

তিনি বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোন চেষ্টা করেনি। দুর্ভাগ্যজনক যে তারা ঠিক একই পদক্ষেপ নিয়েছে যা আগে ব্যর্থ হয়েছে। তারা একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু এবং তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। সম্ভবত বিদেশী সমর্থনে তাদের কাছে বাংলাদেশের জনগণের গ্রহণযোগ্যতা নেই, এবং তারা মনে করে যে তারা একটি জনপ্রিয় দল ছাড়াই দেশকে সংস্কার করবে... এটি একটি অসাংবিধানিকভাবে বাছাই করা সরকার। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করতে হবে।

ব্যাপক অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য তার মা বাংলাদেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার (শেখ হাসিনা) ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

জয় বলেন, সর্বশেষ সামরিক দখলের সময়, তারা আমার মাকে গ্রেপ্তার করেছিল। তারা তাকে বিচারের মুখোমুখি করেছিল এবং তাকে সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছিল। আমার মা এতে ভয় পান না। তারা সেই খেলাটি আবার খেলতে চায়। আমরা এটি আবার খেলতে পারি। তারা কি শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে? আপনি আমার মাকে দোষারোপ করতে পারবেন না।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ করেননি। সংবিধান অনুযায়ী এখনো তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

জয় বলেন, আমার মা আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই পদত্যাগ করেননি, সময়ই পাননি। একটি বিবৃতি দেওয়া ও পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করে। তাই সময় ছিল না। আমার মা নিজের ব্যাগটা পর্যন্ত গোছাতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, সংবিধান অনুযায়ী তিনি (শেখ হাসিনা) এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ ছাড়া অন্তর্র্বতী সরকারের গঠন আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

জেল থেকে মুক্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে জয় বলেন, খালেদা জিয়া অতীতকে না টানার কথা বলেছেন। এটি শুনে আমি খুব খুশি হয়েছি। আসুন, আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি পরিহার করি। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছি, তা (জাতীয়) ঐক্য সরকার হোক বা অন্য কিছু হোক।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠান ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহের কথা জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার মতো শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র আমাদের আছে। আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতি ও সমঝোতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তর্ক করতে পারি। আমরা কোনো বিষয়ে দ্বিমত থাকার বিষয়ে একমত হতে পারি। আমরা সব সময় সমঝোতার পথ খুঁজতে পারি।

দেশে শেখ হাসিনা বিচারের মুখোমুখি হতে রাজি ছিলেন জানিয়ে জয় বলেন, আমার মা কোনো ভুল করেননি। তার সরকারের কর্মকর্তাদের অবৈধ কাজের অর্থ এই নয় যে এসব করতে আমার মা নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর অর্থ এই নয় যে এসবের জন্য আমার মা দায়ী। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা করার বিষয়ে আমার মা কাউকে কোনো নির্দেশ দেননি। পুলিশ সহিংসতা বন্ধ করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছিল। যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে।

যখন ইচ্ছা হবে তখন দেশে ফেরার কথা জানিয়ে জয় বলেন, আমি কখনো অবৈধ কিছু করিনি। সুতরাং কে আমাকে বাধা দেবে? কেউ আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। আমাদের সহায়তা ছাড়া, আমাদের সমর্থকদের ছাড়া কেউ বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে পারবে না।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top