বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২

অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূসকে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৯

ছবি: সংগৃহীত

সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন পাঁচজন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য।

নির্বাচনের আগে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলেছেন, এতে দেশের বিপুলসংখ্যক ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

মঙ্গলবার (তারিখ উল্লেখযোগ্য হলে যোগ করা যাবে) ড. ইউনূসকে পাঠানো এই চিঠিতে সই করেন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান বিল হুইজেঙ্গা, একই উপকমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার সিডনি কামলাগার-ডোভ, কংগ্রেসম্যান জুলি জনসন এবং টম আর সুওজি। এদিন হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়।

চিঠিতে কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করলেও আইনপ্রণেতারা বলেন, জাতীয় সংকটের সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ায় ড. ইউনূসের ভূমিকার প্রতি তারা সমর্থন জানাচ্ছেন। তবে একটি বড় রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পুরোপুরি স্থগিত করা মৌলিক মানবাধিকার এবং ব্যক্তিগত অপরাধ দায়বদ্ধতার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান সরকার কিংবা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আহ্বান এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ২০২৪ সালের গণআন্দোলন দমনের সময় হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন দলটির রাজনৈতিক নিবন্ধন স্থগিত করলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারায় দেশের অন্যতম পুরোনো এই রাজনৈতিক দলটি। একই অভিযোগে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকেও নিষিদ্ধ করা হয়।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় দলটির সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব মামলায় শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের জানুয়ারির ভোটে নির্বাচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

চিঠিতে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দেন। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। আইনপ্রণেতারা বলেন, এসব ঘটনার প্রকৃত জবাবদিহি নিশ্চিত করা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন হওয়া উচিত, প্রতিশোধের ধারাবাহিকতা নয়।

২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি উল্লেখ করে তারা বলেন, সংগঠনের স্বাধীনতা এবং সম্মিলিত নয়—ব্যক্তিগত অপরাধ দায়বদ্ধতার নীতি মৌলিক মানবাধিকার। আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট অপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পুরোপুরি স্থগিত করা এসব নীতির পরিপন্থী বলে তারা মত দেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ব্যালটের মাধ্যমে জনগণের মতামত শান্তিপূর্ণভাবে প্রকাশের সুযোগ দিতে নির্বাচন আয়োজনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। একই সঙ্গে সততা, স্বচ্ছতা ও নির্দলীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত রাখা কিংবা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনরায় চালু করা এসব লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও সতর্ক করেন তারা।

চিঠির শেষাংশে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের অধিকার রয়েছে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারবে। তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং দেশটির গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে ওয়াশিংটন প্রস্তুত।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top