মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

তীব্র তাপদাহে করণীয়!

রাশেদ রাসেল | প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৩০

ছবি: সংগৃহীত

এ বছর গরমটা যেনো একটু অন্য রকম ভাবেই আমাদের কাছে এসেছে। বছরের শুরু থেকেই গরম অনেক বেশি। তীব্র তাপদাহে আমাদের করণীয় কি?

তীব্র দহন এড়াতে অনেকেই যখন অফিস অথবা বাড়ির নিরাপদ ছায়ায় কর্মরত তখন প্রখর সূর্যের কাঠফাটা রোদে জীবিকার তাগিদে যুদ্ধরত এই খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠী। দূর্বল ও অপুষ্ট শরীরে রৌদ্রদগ্ধ পরিশ্রমে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। জ্বর-ঠান্ডা-কাশি, পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, পানিশূণ্যতা, হিটস্ট্রোকের মত জটিল সমস্যার স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থরা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া তারা কখনোই যেন ঘরের বাইরে না যান, বিশেষ করা দুপুর ১১টা থেকে ৩ টার মধ্যে। প্রচুর পানি, পানীয় ও তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে।

এই তাপদাহ মানব শরীরের উপযোগী নয়। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চলমান জীবনের গতিশীলতা স্বাভাবিক রাখতে হবে। ধরে নিতে হবে এটাও এক ধরনের জীবন যুদ্ধ। যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হবে। যুগ যুগ ধরেই প্রতিকূল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করেই বিজয়ী হয়েছে মানুষ। তীব্র তাপদাহে সমস্যা হবেই। কিছু নিয়মের বলয়ে সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকতে হবে রাখতে হবে। ঘরে ও বাইরে সবক্ষেত্রেই প্রচুর সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, বিশেষ করে ঘরের বাইরে বের হলে। প্রচুর পানি, পানীয়, স্যালাইন, শরবত, তাজা রসালো ফল, বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। 

প্রখর রোদ থেকে রক্ষা পেতে ছাতা, হ্যাট/ক্যাপ ও সানগ্লাস ব্যাবহার করতে হবে। একটানা দীর্ঘ সময় রোদে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সূতি, পাতলা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে। অনেক সময় অতিরিক্ত ঘামের জন্য শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ ও খনিজ পদার্থ বের হয়ে যায়। প্রচুর পানি, লেবুর সরবত এবং ফলমূল খেতে হবে। এই ঘাটতি পুরণ না হলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ও অবসাদ দেখা দিতে পারে এবং পরবর্তীতে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

আবাসস্থল পরিচ্ছন্ন ও খোলামেলা রাখতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে। যাদের সামর্থ্য আছে ফ্যান ও এসি ব্যবহার করতে পারেন। গরমের তীব্রতায় কেউ হঠাৎ করে জ্ঞান হারালে বা তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিতে হবে।

প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী কিছুটা মানবিক হতে পারি। খেটে খাওয়া মানুষদের পারিশ্রমিক সাধ্য অনুযায়ী বাড়িয়ে দিতে পারি। রিকশা চালক বা এই শ্রেনীর জনগোষ্ঠীর ভাড়া কিছুটা বাড়িয়ে দিলে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবো না কেউই। তাদের শ্রম ঘন্টা কিছুটা কমিয়ে ছায়ায় বিশ্রামের সময় বাড়াতে পারি। সামান্য কিছু খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয়জলের ব্যবস্হা করতে পারি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর খরতাপ জনিত স্বাস্থ্য সেবায় এগিয়ে আসতে পারি।

বনভূমি ধ্বংস এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়। মানব সম্প্রদায়ের অপরিনামদর্শীতার প্রতিশোধ প্রকৃতি নিজের মত করেই নিচ্ছে। এখনো সময় আছে। এই সতর্ক বার্তা প্রকৃতিই পাঠিয়েছে। দ্রুত বনায়নের কাজ শুরু করতে হবে। সেই সাথে প্রকৃতি বান্ধব জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে।

এই খরদাহ চিরকালীন নয়। আবারও সুশীতল বারিধারায় সিক্ত হবে স্বজন মাটি। সে পর্যন্ত নিজেকে, নিজের চারপাশের মানুষ ও পরিবেশকে সুস্হ ও স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।

 

লেখক: ডা. প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) নাজমা বেগম নাজু।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top