‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করবে রাশিয়া ও ইউক্রেন: ট্রাম্প

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৫, ১৮:২৩

ফাইল ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেন ধীরে ধীরে একটি নতুন মোড় নিচ্ছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই ভয়াবহ সংঘাতের মাঝে অবশেষে আসতে পারে আলোচনার সুযোগ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন শিগগিরই যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দুই ঘণ্টার ফোনালাপের পর তিনি এই ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার (২০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে, ট্রাম্প জানিয়েছেন, পুতিনের সাথে তার আলোচনা হওয়ার পর তিনি একটি গ্রুপ কলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সেই পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়েছেন। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি এবং ফিনল্যান্ডের নেতাদের কাছেও এই পরিকল্পনাটি শেয়ার করেছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়া এবং ইউক্রেন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ যে, এই আলোচনা যুদ্ধ শেষ করার দিকেও যেতে পারে।’

পরে হোয়াইট হাউসে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানান, তিনি মনে করেন ‘ বেশ কিছু অগ্রগতি হচ্ছে।’

এদিকে, পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাথে একমত হয়েছি যে, রাশিয়া সম্ভাব্য ভবিষ্যতের শান্তি চুক্তির বিষয়ে ইউক্রেনীয় পক্ষের সাথে একটি স্মারকলিপির প্রস্তাব দেবে এবং কাজ করতে প্রস্তুত।’

মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে সরাসরি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে ট্রাম্পের সমর্থনের জন্য পুতিন তাকে ধন্যবাদ জানান। গত সপ্তাহে তুরস্কে প্রথম মুখোমুখি আলোচনার জন্য বসেছিলেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা।

সোমবার বিকেলে ট্রাম্প-পুতিন ২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ফোনে কথা বলেন। ট্রাম্প বলেন তাদের আলোচনা ‘খুব ভালো হয়েছে।’

অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও ট্রাম্প কথা বলেছেন এবং আলোচনার বিষয়টি তাকে অবহিত করেছেন। জেলেনস্কি এই সময়ের ঘটনাকে "একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত" হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার বাইরে না রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, যদি যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় সক্রিয় না থাকে, তবে কেবলমাত্র পুতিনই উপকৃত হবেন। জেলেনস্কি বলেছেন, আলোচনায় ইউরোপ ও আমেরিকার প্রতিনিধিদের যথাযথ ভূমিকা রাখা অত্যন্ত জরুরি। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, "যুক্তরাষ্ট্র যদি আলোচনার বাইরে সরে যায়, তাহলে কেবল একজনই উপকৃত হবে, তিনি হলেন পুতিন।"

এই সময় জেলেনস্কি আরও বলেন, কোনো চুক্তি নিয়ে এখনো বিস্তারিত তথ্য নেই, তবে রাশিয়া যদি কোনো প্রস্তাব পাঠায়, তাহলে ইউক্রেন তাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে জানাবে। পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপের পর জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো কথা বলেন। এই আলোচনায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ফিনল্যান্ডের নেতারাও অংশগ্রহণ করেন। ভন ডের লেইন ট্রাম্পকে যুদ্ধবিরতির জন্য তার “অক্লান্ত প্রচেষ্টার” জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এতে বলা যায়, রাশিয়া ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের অবসানে একটি কূটনৈতিক আলোচনার আশার আলো তৈরি হয়েছে। যদিও এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি, যেমন কবে শুরু হবে আলোচনা, কী হবে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা, কিংবা এর আওতায় কী থাকবে—তবুও এতদিন পর দুই পক্ষের আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই আলোচনা সফল হলে শুধু ইউক্রেন নয়, সারা বিশ্বের জন্যই তা হবে একটি বড় শান্তির বার্তা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আলোচনা ব্যর্থ না হয় এবং যুদ্ধের অবসান ঘটে একটি সম্মানজনক ও টেকসই সমঝোতার মাধ্যমে। তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top