বার্ড ফ্লু নিয়ে সতর্কতা ও প্রাদুর্ভাব রোধের কৌশল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:০১
বার্ড ফ্লু বা এইচফাইভএনওয়ান ভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সতর্কতা বহুবছর ধরে জারি রয়েছে। মূলত পাখি থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকা এই ভাইরাসটি, যদি মানুষের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে ছড়ায়, তাহলে বড় ধরনের মহামারির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র তথ্যমতে, ২০০৩ থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ২৫টি দেশে মোট ৯৯০ জনের এইচফাইভএনওয়ান সংক্রমণ লিপিবদ্ধ হয়েছে, যার মধ্যে ৪৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসে ১৮ কোটির বেশি পাখি আক্রান্ত হয়েছে এবং অন্তত ৭০ জন মানুষ সংক্রমিত হয়েছে।
মানুষে সংক্রমণের উপসর্গ সাধারণত তীব্র ফ্লু, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা এবং চোখের প্রদাহ। তবে কিছু ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গও দেখা দেয় না। গবেষকরা সতর্ক করে বলছেন যে, ভাইরাসটি সহজেই মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে এমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত নজরদারিতে রাখা জরুরি।
ভারতীয় গবেষকরা ফিলিপ চেরিয়ান ও গৌতম মেনন সম্প্রতি একটি নতুন পিয়ার-রিভিউড মডেলিং গবেষণা করেছেন। তারা ভারাতসিম নামের ওপেন-সোর্স সিমুলেশন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দেখেছেন, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কিভাবে শুরু হতে পারে এবং প্রাথমিক হস্তক্ষেপে তা কত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
গবেষণার মডেল অনুযায়ী, ভাইরাসটি সাধারণত একটি সংক্রমিত পাখি থেকে একজন মানুষের শরীরে আসে। প্রথম সংক্রমণের পর যদি মানুষ থেকে মানুষে ধারাবাহিক সংক্রমণ ঘটে, তখনই প্রকৃত বিপদ তৈরি হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সংক্রমিত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকা মানুষদের কোয়ারেন্টিনে রাখা গেলে প্রাদুর্ভাবকে প্রায় নিশ্চিতভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে ১০ জনের বেশি সংক্রমণ হলে, ভাইরাস দ্রুত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
গবেষণায় তামিলনাড়ুর নামাক্কাল জেলাকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে ১,৬০০-এর বেশি পোলট্রি খামার এবং সাত কোটি মুরগি রয়েছে। সিমুলেশনে একটি সিন্থেটিক কমিউনিটি তৈরি করে দেখা হয়েছে, ভাইরাস প্রথমে কর্মস্থল বা বাজার থেকে মানুষে ছড়ায় (প্রাথমিক সংস্পর্শ), এরপর বাড়ি, স্কুল ও অন্যান্য সামাজিক সংযোগের মাধ্যমে মাধ্যমিক সংস্পর্শে পৌঁছায়। গবেষকরা সতর্ক করে বলছেন, মানুষের মধ্যে এইচফাইভএনওয়ান মহামারি নীরবভাবে শুরু হতে পারে, তাই উন্নত নজরদারি, প্রাথমিক হস্তক্ষেপ এবং দ্রুত জনস্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক গৌতম মেনন বলেন, “মানুষের মধ্যে মহামারি হওয়ার আগে সতর্ক ব্যবস্থা নিলে প্রাদুর্ভাবকে আগেভাগেই থামানো সম্ভব।”
এনএফ৭১/ওতু
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।