তিব্বতের রাজধানী লাসায় অবস্থিত হিবালিন মসজিদ
বিশ্বের সবচেয়ে উচুতে অবস্থিত যে মসজিদ
নিশি রহমান | প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারী ২০২৩, ০৫:৩৪
চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল তিব্বতের লাসায় সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৬৫০ মিটার উচুতে অবস্থিত হিবালিন মসজিদ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উচুতে অবস্থিত মসজিদগুলোর একটি। ১৭১৬ সালে মসজিদটি প্রথম নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে পুনরায় সংস্কার করা হয়।
হিবালিন মসজিদ কমপ্লেক্সের তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। এর মোট আয়তন ২ হাজার ৬০০ বর্গ মিটার। মসজিদটিতে নামাজের স্থান, পাই বিল্ডিং, বাঙ্কার বিল্ডিং, অজুখানা, গোসলখানাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
আরও পড়ুন>>> বিশ্বনবী (সা.)-এর জন্য যে সাহাবি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন
মসজিদটি ঐতিহ্যবাহী জাং স্থাপত্যশিল্পের সাথে স্থানীয় ও ধর্মীয় বৈশিষ্টের সম্মিলনে নির্মিত। এর স্তম্ভ ও চূড়া তিব্বতীয় স্টাইলে নির্মিত। আর মসজিদের ভেতরে অংশ ইসলামিক স্থাপত্যকলা অনুযায়ী ফুল ও বিভিন্ন গাছের চিত্রাঙ্কিত রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রের অনুমান করা হয় যে, চীনের মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১ থেকে ৩ শতাংশ মুসলমানরা কনফুসিয়ানবাদ, তাওবাদ, চীনা বৌদ্ধধর্ম এবং নাস্তিকতার সাথে চীনা লোকের মতাদর্শের আধ্যাত্মিক বিশ্বাসগুলির দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত।
উল্লেখ্য, খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের খেলাফতকালে (৭১৭-৭২০) চীন ও তিব্বতে ধর্ম প্রচারের জন্য একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর অনুরোধ পান। তাই তিনি সালিত বিন আবদুল্লাহ আল-হানাফিকে তিব্বতে প্রেরণ করেন। তিনি সেখানকার মানুষের মধ্যে দ্বিনের দাওয়াত প্রচার করেন। মুসলিম শাসক মুহাম্মদ বিন কাসিম ৭১২ সালে সিন্ধু বিজয় করলে তিব্বতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারিত হয়। আব্বাসীয় মুসলিম শাসনামলে তিব্বত ও ইসলামী বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহাল ছিল। অষ্টম শতাব্দী থেকে তিব্বতের স্বর্ণ মুসলিম বিশ্বে রপ্তানি হতো। দশম শতাব্দীতে ফারসিতে লিখিত ‘হুদুদ আল-আলম’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, তিব্বতের কেন্দ্রীয় শহর ‘লাসাতে’ একটি মসজিদ ছিল। যদিও এই শহরে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল খুবই কম।
তিব্বতি মুসলমানদের বংশধারা মিশ্রিত। তাদের পূর্বপুরুষরা কাশ্মীর, লাখাদ ও মধ্য এশিয়া থেকে তিব্বতে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। তারা সেখানকার তিব্বতি মহিলাদের বিয়ে করে। এভাবে মুসলমানরা তিব্বতের সমাজের অংশে পরিণত হয়। তিব্বতের বৌদ্ধ নেতারা সাধারণত সহিষ্ণু। সেখানকার মুসলমানদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচিতির প্রতি বৌদ্ধ নেতারা উদার মনোভাব পোষণ করেন। পঞ্চম দালাই লামার (১৬১৭-১৬৮২) শাসনামলে মুসলমানরা ধর্মীয়, আইনগত, শিক্ষা, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অধিকার ভোগ করতেন। পঞ্চম দালাই লামা একটি মসজিদ ও গোরস্তানের জন্য মুসলমানদের কিছু জমি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। মুসলমানরা তাদের ধর্মীয়, আইনগত ও শিক্ষা-সংস্কৃতি বিষয় ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে পারত। মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ বিবাদ-কলহ বা বিরোধ-মীমাংসার জন্য তারা নিজস্ব ইসলামী আইনের প্রয়োগ করতে পারত। তারা সরকারের পক্ষ থেকে কর অবকাশও লাভ করেছিল।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।