জুবায়েরপন্থিদের এই সমাবেশ রাজনৈতিক শোডাউন, মন্তব্য সাদপন্থিদের

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:৩১

ছবি: সংগৃহীত

তাবলীগ জামাতের স্বঘোষিত আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে আসার সুযোগ দেওয়া হলে অন্তর্র্বতী সরকারকেই দেশ ছেড়ে পালাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কওমিপন্থী আলেম-ওলামারা। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ইসলামি মহাসম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সম্মেলনে মাওলানা আব্দুল হামিদ (পীর মধুপুর) বলেন, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। আমি বলব- কিসের পরামর্শ, এই সম্মেলন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সরকারকে এটাই বাস্তবায়ন করতে হবে। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যদি বেয়াদবকে (সাদ কান্ধলভী) বাংলাদেশে আসতে দেয়, তাহলে সরকারকেও পালিয়ে যেতে হবে।

হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, আমরা ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এ সরকারকে বসিয়েছি। কেউ যদি রক্ত চক্ষু দেখায়, তবে আমরা তাদের চক্ষু উপড়ে ফেলব। জাতির পথপ্রদর্শক হবে আলেমরা। তাবলীগের রাহবারও আলেমদের থেকেই হবে, অন্য কেউ নয়।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্বঘোষিত আমির সাদ ও তার অনুসারীরা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই সেটি হতে দেব না। তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র যেকোনো মূল্যে আমরা ব্যর্থ করে দেব।

সমাবেশে মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী বলেন, সাদ স্বঘোষিত তাবলিগের আমির বলে ঘোষণা দিয়েছে। কোরআন হাদিস, আলেম-ওলামা, আল্লাহর অলি, নবী ও স্বয়ং আল্লাহর বিরুদ্ধে কুফরি বক্তব্য দিয়েছে৷ তাই সারা বিশ্বে তাবলিগের মূলধারা তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। সাদের অনুসারীরা হচ্ছে কাদিয়ানী গ্রুপ। তারা ইসলামের মূলধারায় বিভক্তি সৃষ্টি করছে। তাবলীগের নামে কাদিয়ানীদের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। কাদিয়ানিরা বাংলাদেশে অবাঞ্চিত।

নরসিংদীর জামিয়া কোরআনিয়া বৌয়াকুর মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা ইসমাইল নুরপুরী বলেন, আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করলো- সাদ অনুসারীরা বাতিল, গোমরাহ। আমরা চাই, তিনি যেন বাংলার জমিনে পা রাখতে না পারে। তারা যেখানেই যায় সেখানেই রক্ত ক্ষয় হয়।

জামেয়া হোসাইনিয়া মিরপুর মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া বলেন, মাওলানা সাদ এমন কিছু বক্তব্য দিচ্ছেন যা একজন ইসলাম প্রচারকের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তিনি নবীদের সমালোচনা করেছেন, সাহাবা ও দ্বীন ও ইসলাম সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন। যে ব্যক্তি এমন কথা বলেন তিনি তাবলিগের আমির হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। তাকে আনার কোনো ষড়যন্ত্র যদি চলে তাহলে তিনি যেদিক দিয়েই আসবেন সেদিক দিয়ে লংমার্চ চলবে। কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বিদের উদ্দেশ্য করে কাকরাইল মসজিদের কোনো স্থান ও বিশ্ব ইজতেমার মাঠ বাতিলপন্থীদের জন্য ছেড়ে না দেওয়ারও আহবান জানান তিনি।

সম্মেলন থেকে নয় দফা দাবি পেশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে-দেশের সকল আলেমদের ওপর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শাপলা চত্ত্বরে গণহত্যায় দোষী ও জড়িতদের বিচার, সারাদেশের কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, টঙ্গী ময়দানে নিরীহ ছাত্রদের ওপর সাদপন্থীদের হামলার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত, স্বঘোষিত আমির সাদকে বাংলাদেশে কোনো অবস্থাতেই আসতে না দেওয়া। মহাসম্মেলনে কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থীদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না বক্তারা জানান। এছাড়াও কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়।

এদিকে, বিভক্ত তাবলিগ জামায়াতের মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়েরপন্থিদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশ নিছক একটি রাজনৈতিক শোডাউন বলে মন্তব্য করেছেন দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) তাবলিগের জুবায়েরপন্থিদের মহাসম্মেলনে ‘মাওলানা সাদকে’ বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হবে না, এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীপন্থিদের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. আবু সায়েম।

মো. সায়েম বলেন, এটা নিছক একটি রাজনৈতিক শোডাউন। সামনের নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের জড়ো করে তারা সরকারকে চাপে ফেলতে চাইছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাইছে। তাবলিগের এই মোবারক মেহনতের সঙ্গে ছাত্ররা এখনো সম্পৃক্ত নয়।

সায়েম বলেন, আমরা মূল ধারার মেহনত করি। আমরা কাউকে হুমকি দিতে চাই না। তারা যে আমাদের ইজতেমা করতে দেবে না বা কাকরাইল মসজিদে প্রবেশ করতে দেবে না এগুলো ফাঁকা বুলি। কারণ সরকারই এর সমাধান করে দিয়েছে। দুই পক্ষকে সরকার সময় ভাগ করে দিয়েছে। এসব মীমাংসিত বিষয়ে উস্কানি দেওয়া কীসের লক্ষণ সেটা সাধারণ মানুষ বুঝবে।

তিনি বলেন, আমাদের রোখ (সময়) আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু। তখন আমরা কাকরাইলে যাব, ইনশাআল্লাহ। এর আগে, তাবলীগ জামায়াতের ইজতেমাকে কেন্দ্র করে যদি মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীদের এদেশে আসতে দেওয়া হয়, তাহলে এই অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকেই দেশ ছেড়ে পালাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাবলীগ জামায়াতের মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়েরের অনুসারীরা।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top