নারী যাই পরুন না কেন, তার সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে
হিজাব পরতে বাধ্য করলে প্রতিবাদ করবো: মালালা ইউসুফজাই
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৪৪
মালালা লিখেছেন, একজন নারী যাই পরুন না কেন, তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে। আমি আগেই বলেছি, যদি কেউ আমাকে আমার মাথা ঢেকে রাখতে বাধ্য করে, আমি প্রতিবাদ করবো।
হিজাব না পরার অভিযোগে পুলিশের হাতে আটকের পর ইরানী তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশটির ৫০টিরও বেশি শহরে বিক্ষোভ চলছে। নারী স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপকারী ইরান সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
ইরান হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিক্ষোভ-সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৫০ জন। পুলিশ বিক্ষোভ দমাতে কাঁদনে গ্যাস নিক্ষেপসহ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। ইন্টারনেট সংযোগ সেবা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
ইরানের চলমান বিক্ষোভে পৃথিবীর নানাপ্রান্তের অধিকারকর্মীরা প্রতিবাদ ও সংহতি জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইরানের এই চলমান বিক্ষোভ আলোচনায় রয়েছে।
ইরানে চলমান হিজাববিরোধী বিক্ষোভের বিষয়ে কথা বলেছেন নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত মালালা ইউসুফজাই। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে জিও নিউজ।
ইনস্টাগ্রামে মালালা লিখেছেন, একজন নারী যাই পরুন না কেন, তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে। আমি আগেই বলেছি, যদি কেউ আমাকে আমার মাথা ঢেকে রাখতে বাধ্য করে, আমি প্রতিবাদ করবো। যদি কেউ আমাকে আমার স্কার্ফ খুলতে বাধ্য করে, তাহলেও আমি প্রতিবাদ করবো।
ভারতের কর্নাটকে হিজাব বিতর্কের সময় জোরপূর্বক হিজাব পরতে না দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন মালালা। তখনও তিনি বলেছিলেন, মেয়েদের হিজাব পরে স্কুলে যেতে দিতে অস্বীকার করা খুবই খারাপ ব্যাপার। হিজাব পরা নিয়ে নারীদের মধ্যে কম-বেশি আপত্তি আছে। ভারতীয় নেতাদের অবশ্যই মুসলিম নারীদের প্রতি এই ঘটনা বন্ধ করতে হবে।
মাথায় হিজাব না থাকায় গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মাহসা আমিনি নামের ২২ বছরের এক তরুণী। গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চারদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাহসার।
পুলিশের অভিযোগ, মাহশা আমিনি হিজাব সম্পর্কিত নিয়ম ভঙ্গ করে। এরপরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার মৃত্যু হয়েছে স্বাস্থ্যগত কারণে। তবে পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী এবংবহু ইরানির দাবি, পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে মাহশার।
সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাহসার মৃত্যু হয়েছে।
তবে মাহসার স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে মাথায় গুরুতর আঘাত করার পরই জীবনসংকটে পড়েন তিনি এবং ওই আঘাতের জেরেই তার মৃত্যু হয়। মাহসা শারীরিকভাবে সুস্থ্য ছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা যদি এখনই এর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ান তাহলে একদিন তাদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে। দেশটিতে এমন সময়ে এই ঘটনা ঘটলো যখন ইরানের মানুষ এমনিতেই ক্ষুব্ধ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের এলিট রাজনীতিকদের দুর্নীতি, ৫০ শতাংশের বেশি মুদ্রাস্ফীতির কারণে দারিদ্র বেড়ে যাওয়া, পারমাণবিক আলোচনায় অচলাবস্থা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব তরুণদেরসহ একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে হতাশ করে তুলেছে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।