ইরানি নারীদের সমর্থনে পার্লামেন্টে চুল কাটলেন ইউরোপীয় সংসদের সদস্য
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৩৮
সঠিকভাবে হিজাব না পরায় নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মাহশা আমিনী নামে এক তরুণীর মৃত্যুকে ঘিরে ইরানে চলমান হিজাববিরোধী আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে নিজের মাথার চুল কেটে ফেলেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের (ইপি) সুইডিশ এক সদস্য।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই সদস্যের নাম আবির আল-সাহলানি। ইরাকি বংশোদ্ভূত আল-সাহলানি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সুইডিশ সদস্য।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বক্তৃতা দেওয়ার সময় কাঁচি দিয়ে নিজের মাথার চুল কেটে ফেলেন তিনি।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মারা যান তিনি।
পুলিশের নির্যাতনে আমিনীর প্রাণহানি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। এই ঘটনার পর ইরানে গত তিন বছরের মধ্যে বৃহত্তম বিক্ষোভ শুরু করেছেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ইরাকি বংশোদ্ভূত সদস্য আবির আল-সাহলানি বলেন, ইরান মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ক্ষোভ নিপীড়কদের চেয়ে বেশি হবে। ইরানের নারীরা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের পাশেই রয়েছি।
এই বক্তৃতা দেওয়ার সময় হাতে কাঁচি তুলে নেন তিনি। মাথার পেছনের পনিটেইল কাটতে কাটতে তিনি বলেন, ‘জিন, জিয়ান, আজাদি। এ সময় আবারও কুর্দি নারীদের জীবনের স্বাধীনতা চান তিনি।
আবির তাঁর ভাষণে বলেন, ইরান মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ক্ষোভ নিপীড়কদের চেয়ে বড় হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত ইরানের নারীরা মুক্ত হবেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা, ইইউর জনগণ-নাগরিকেরা ইরানে নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা কোনো ধরনের শর্ত ছাড়া অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
তেহরানের বিরুদ্ধে ইইউর ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান আবির।
আবিরের ভাষণ ও চুল কাটার ভিডিও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হয়েছে। তিনি তাঁর ফেসবুকেও এই ভিডিও দিয়েছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, আবির তাঁর কাটা চুলের গোছা হাত দিয়ে ধরে ওপরের দিকে তুলে ধরেছেন। এ সময় তিনি উচ্চ স্বরে বলেন, ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদ্যসমাপ্ত অধিবেশনে ইরানের নারীদের পক্ষে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলকে অভিযুক্ত করেছেন আবির।
আবির বলেন, এখন কথা বলার সময়। এখন কাজ করার সময়। ইরানের শাসকদের হাত রক্তে রঞ্জিত।
এদিকে জোসেফ বোরেল বলেন, বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন চালানোর জন্য ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞামূলক ব্যবস্থা প্রস্তুত করছে ইইউ।
পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভ ঠেকাতে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভে দমন-পীড়নের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন। শত শত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হিজাবনীতি ভঙ্গ করার অভিযোগে দেশটির নীতি পুলিশ মাসাকে আটক করেছিল। পুলিশি হেফাজতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাসার মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অস্থির পরিস্থিতিতে মাসার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য আবির আল-সাহলানি ছাড়াও ইরানি নারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোচি এবং ইসাবেলা হাপার্টও চুল কেটেছেন।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।